সম্মেলনের পরেই নির্বাচনি মিশন

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো ১৮ মাস। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। আগামী ডিসেম্বরে হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। আর এই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে আসা নেতৃত্বের হাতেই ন্যস্ত হবে নির্বাচনি বৈতরণি পার হওয়ার দায়িত্ব।

জাতীয় সম্মেলনের পরই নির্বাচনি মিশনে নামবে আওয়ামী লীগ। এর আগে তৃণমূল গোছাতে চলতি মাস থেকে সারা দেশ সফরে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই তৃণমূলের সর্বস্তরের সম্মেলন শেষ করা হবে।

এছাড়া জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনগুলোও শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এখন থেকেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করে মাঠ দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

এদিকে জাতীয় সম্মেলন ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্ত্ততির রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে আগামীকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন, দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণের পাশাপাশি তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা বন্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

নির্বাচনি মাঠ গোছানোর পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইও শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এলাকায় উন্নয়ন, জনপ্রিয়তা, কোন্দল, দুর্নীতিসহ বিগত কয়েক বছরের এমন নানা বিষয় তুলে ধরে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি-মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত আমলনামা তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তাও যাচাই করা হচ্ছে। বারবার মাঠ জরিপ করে আমলনামা হালনাগাদ করার কাজ চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক গোপন জরিপের মাধ্যমে প্রত্যেক আসনে ‘গুড ইমেজ’-এর প্রার্থী বাছাই করছে দলটি। আসনভিত্তিক মনোনয়ন একজন পেলেও নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে এবার প্রতি আসনে তিন প্রার্থীর নাম বাছাই করা হচ্ছে। নির্বাচনের সময়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর অবস্থান যাচাই করেই বাছাইকৃত তিন প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনের হাতে দলীয় প্রতীক নৌকার টিকিট তুলে দেবেন দলটির হাইকমান্ড। যারা ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের তৃণমূলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন তাদের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে চায় আওয়ামী লীগ।

বিশেষ করে যেসব সংসদ সদস্য নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তাদের আর সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলের নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে এমন বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনেক সংসদ সদস্যের কপাল পুড়তে পারে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি জানান, দলের জাতীয় সম্মেলন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্র অনুসারে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ডিসেম্বরের ২০ তারিখে শেষ হবে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, যথাসময়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে নাকি আগে বা পরে হবে—সে সিদ্ধান্ত আসবে আগামীকালের বৈঠক থেকে।

প্রসঙ্গত, দলের ভিতরে জাতীয় সম্মেলন দুই থেকে তিন মাস এগিয়ে আসার গুঞ্জন রয়েছে। আওয়ামী লীগের দুই জন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, তৃণমূলে বিভক্তির রাজনীতি দূরীকরণ, এমপি-মন্ত্রীদের বলয় ভাঙাসহ সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিতে পারেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। দলটির অনেকের মতে, সম্মেলনের মাত্র এক বছর পরেই দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে এই জাতীয় সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগের জন্য। কারণ দলকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলার দক্ষতা ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন নেতৃত্বগুণ রয়েছে—এমন নেতৃত্ব নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের।

এদিকে আগামীকালের সভার আলোচ্যসূচিতে রয়েছে শোক প্রস্তাব, ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২৫ মে জাতীয় কবি জাতীয় নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস, ১১ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, সাংগঠনিক ও বিবিধ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি গণভবনে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় আগামী নির্বাচনের প্রস্ত্ততি নেওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। সাংগঠনিক টিম সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ সম্মেলনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ এর প্রায় অর্ধেক। আগামী সপ্তাহ থেকে আবারও সারা দেশে সম্মেলনের কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা সম্মেলনের তারিখও চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ১২ মে ফরিদপুর জেলা, ১৪ মে চুয়াডাঙ্গা জেলা, ১৫ মে মেহেরপুর জেলা এবং ঝিনাইদহ জেলার সম্মেলন ১৭ মে অনুষ্ঠিত হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিষ্পত্তি হবে। যারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ বাস্তবায়ন করা হবে, না তাদেরকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হবে—এ ব্যাপারে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে। জানা গেছে, বিদ্রোহী ও তাদের মদতদাতাদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে যে সাংগঠনিক ব্যবস্হা নেওয়ার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে থেকে সুপারিশ করা হয়েছে সেই সুপারিশগুলোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বৈঠকে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১