বানের পানিতে ভাসছে সুনামগঞ্জ, ত্রাণের জন্য হাহাকার

সিলেট প্রতিনিধিঃ বানের পানিতে ভাসছে সুনামগঞ্জ। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা, বর্ষণ ও বজ্রপাতে নাকানি চুবানি খাচ্ছে হাওরবাসী। বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে পড়ছে দোয়াবাজারের দোহালিয়া এলাকার সেতু। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

দুর্গত এলাকায় নলকুপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিন মজুররা। খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন তারা। তাদের পাশে নেই কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা সেবক। জেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা দিলেও তা খুবই অপ্রতুল। ত্রাণের জন্য বাড়ছে হাহাকার।

হাওরাঞ্চলের দুর্গতরা জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে টানা ২৬ দিন পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে জেলার প্রায় ৩০টি হাওর ডুবে ফসলহানির ঘটনা ঘটে। কম ক্ষতি হলেও বেশীর ভাগ ফসল ঘরে তুলেছেন কৃষক। সেই ফসল শুকানোর সময় যখন আসল তখনই দ্বিতীয় দফায় বন্যা এসে ধান শুকাতে না পেরে গ্যারা দেখা দেয়।
দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না তারা। এ যেন মরার উপর খাড়ার গাঁ। এছাড়াও জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার সাথে যোগাযোগে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শহরের কালিপুর, শান্তিবাগ, নতুনপাড়া, ওয়েজখালি, ষোলঘর, বড়পাড়া ও তেঘরিয়া এলাকায় অনেক বাসা বাড়িতে পানি।

চরম দুর্ভোগের মধ্যে চুলায় আগুন জ্বালাতে পারছেন না। কালিপুরের আমীর হোসেন জানান, বন্যার পানিতে আমাদের গ্রামের অনেকেই পানিবন্দি। আয় রোজগার নেই। এখানে দুর্ভোগে শিকার বন্যার্তদের কেউ ত্রাণ নিয়ে আসছেন না। সংকট আরো ঘণিভুত হলে খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে।

ছাতক উপজেলার চাকলাপাড়া গ্রামের আব্দুল মতিনের স্ত্রী জানান, আমার ঘরে হাঁটু পানি চারদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে আছি। ঘরে চাল নেই, কাজ নেই। না খেয়েই মরতে এখন। শুক্রবার দুপুর ১২ টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘরস্থ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার এখনো ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং গত ২৪ ঘন্টায় শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭৮ মিঃমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে জেলার ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন গতকয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ সদর, বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৭৭৭ হেক্টর বোরো ধান,৭৫ হেক্টর বাদাম,আউশ বিজতলা ৭৪ হেক্টর, সবজি ৬০ হেক্টর,আউশ ধান ২০ হেক্টর পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতির পরিমান ৮০ লাখ টাকা হবে।

মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজারে প্রায় সাড়ে ৪ শত পুকুর ডুকে ৩৫ টন মাছ ও ৩০ লাখ পোনা বানের পানিতে ভেসে যায়,যার ক্ষতির পরিমান আড়াই কোটি টাকা হবে। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন ইতিমধ্যে ছাতক, দোয়ারাবাজার,সদর ও তাহিরপুরে প্রায় ৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের মাধ্যমে প্রশাসন উদ্যোগে ১৪০ মেট্রিন টন জি আর এর চাল, নগদ ১২ লাখ টাকা ও ২হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। ২৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষ্কাার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এবং ২০টির মতো আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তত রাখা হয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১