চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে টাকার বিমিয়ে বাড়ির দলিল ও ফাঁকা চেক নিলেন রুয়েট শিক্ষক

মঈন উদ্দীন: রাজশাহী নগরীর দেবিশিংপাড়ার মুকুল হোসেন রুয়েটে একটি চাকরির আশায় দীর্ঘ ১২ বছর বিনা পারিশ্রমিকেকাজ করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (রুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো: জগলুল সাদাতের বাসা ও মেসে। তবে জগলুল সাদাতের সহযোগিতায় প্রথমে কেয়ারটেকার পদে অনিয়মিত ও পরে নৈশ প্রহরী পদে নিয়মিত একটি চাকরি মিললেও শান্তিতে নেই মুকুল। কারণ এই চাকরির জন্য জগলুল সাদাতকে দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় মুকলকে চাকরিচ্যুত করা হবে। তাই রুয়েটের এই শিক্ষকই মুকুলকে পরামর্শ দিয়েছেন কীভাবে টাকা পরিশোধ করবেন। কথা অনুযায়ী- মুকুলের বাড়ির জমির দলিল ও ফাঁকা ব্যাংক চেক নিয়েছেন শিক্ষক জগলুল সাদাত। যেদিন টাকা পরিশোধ করতে পারবেন সেদিন জমির দলিল ও ফাঁকা চেক ফেরত পাবেন বলে তাকে সাফ জানিয়ে দেন। এ অবস্থায় চরম নিরুপায় হয়ে পড়েছেন মুকুল।
মুকুল বলেন, প্রথমে প্রায় ৮ বছর জিয়া হলে কেয়ারটেকার পদে (অনিয়মিত) চাকরি করেছি। তখন জগলুল সাদাত স্যার জিয়া হলের প্রভোস্ট ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩০ জুন নৈশ প্রহরী পদে (নিয়মিত) চাকরীতে যোগদান করি। তিনি বলেন, আমাকে জগলুল সাদাত স্যার বলেছিলেন তোমাকে রুয়েটে চাকরি দেব। তবে শর্ত হচ্ছে- আমার বাড়ি ও মেসে নিয়মিত ফ্রি সার্ভিস দিতে হবে। সামান্য একটি চাকরির আশায় আমি দীর্ঘ ১২ বছর বাসা ও মেসে চাকরি করেছি। এরপর জিয়া হলে কেয়ারটেকার পদে অনিয়মিত ও পরে নৈশ প্রহরী পদে নিয়মিত একটি চাকরি পাই। এখনো এই চাকরিতে আছি। কিন্তু আমি শান্তিতে নেই।
মুকুল বলেন, জগলুল সাদাত স্যার আমাকে চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে আমার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা দাবি করেন। আমার ধারণা ছিল- স্যারের বাসা ও মেসে যেহেতু ফ্রিতে দীর্ঘ এক যুগ কাজ করেছি। তাই স্যার আমার কাছ থেকে চাকরির বিনিময়ে টাকা নেবেন না। কিন্তু এক যুগ বিনাপারিশ্রমিকে কাজ করেও স্যারের মন গলেনি। স্যার আমাকে বললেন, তোমাকে নৈশপ্রহরী পদে চাকরি দেব। এজন্য আমাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। তখন আমি স্যারকে বললাম, স্যার আমি সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দিতে পারবো। আমার এমন কথা শুনে স্যার বলেন, টাকা দিতে না পারলে ফাঁকা ব্যাংক চেক ও বাড়ির জমির দলিল দিবে। তুমি চাকরিতে যোগদানের পর তোমাকে লোন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। তখন তুমি লোন তুলে আমার দাবিকৃত ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করবে।
এরই মধ্যে রুয়েট রুপালি ব্যাংক শাখা হতে ৭ লাখ টাকা লোন তুলেন মুকুল। আর তার বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে আরো দেড় লাখ টাকা লোন নিয়ে মোট সাড়ে ৮ লাখ টাকা জগলুল স্যারের হাতে তুলে দেন তিনি। স্যার অবশিষ্ট আড়াই লাখ টাকার জন্য মুকুলের বাড়ির আড়াই কাঠা জমির দলিল এবং ফাঁকা চেক গ্রহণ করেন। তবে মুকুল স্যারের কাছে সময় নেন এক বছরের। এরই মধ্যে অর্থলোভী স্যার তাকে চাকরীচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। তিনি চেক বাউন্স করার জন্য তার একজন বিশ^স্ত শিক্ষককে রুয়েট রুপালি ব্যাংকে পাঠান। তার আগেই ব্যাংক থেকে মুকুলকে ফোন দিয়ে জানানো হয়। আপনার নামের চেক বাউন্স করতে কাটাখালির এক ব্যক্তি এসেছেন। খবর পেয়ে মুকুল ব্যাংকে ছুটে যান। কিন্ত তার আগেই ওই ব্যক্তি ব্যাংক থেকে সরে পড়ে। এরপর মুকুল দৌড়ে যান জগলুল স্যারের কাছে। বলেন, স্যার আপনার কাছে টাকার জন্য সময় নিয়েছি। বাড়ির দলিল ও ফাকা চেক সহি দিয়ে আপনাকে হস্তান্তর করেছি। তারপরও আপনি আমাকে মানুষিক ভাবে নির্যাতন করছেন কেন? এ সময় উত্তরে স্যার বলেন, চাকরি রক্ষা করতে হলে দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে হবে। নইলে বাড়ির দলিল দেবো না। উল্টা চেকে মোটা অংকের টাকা বসিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করবো। স্যারের এমন বক্তব্যে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন নৈশ প্রহরী মুকুল। তিনি টাকার টেনশানে এরই মধ্যে স্ট্রোক করেন। বর্তমানে টাকা যোগাড় করতে ধরনা দিচ্ছেন দ্বারে দ্বারে। চাকরি না থাকলে বৌ-বাচ্চাদের খরচ চালাবেন কিভাবে এমন চিন্তায় ঘুম নেই তার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রুয়েট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো: জগলুল সাদাত বলেন, সামনাসামনি আসেন আপনি কথা বলব। পরে কোথায় সামনাসামনি আসব একথা বলতেই মোবাইল সংযোগ কেটে দেন তিনি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১