বগুড়ার ভেলুড়পাড়ায় স্ত্রীর পাশে শায়িত হলেন ড. এনামুল হক

সোনাতলা প্রতিনিধিঃ স্ত্রীর কবরের পাশে শায়িত হলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ও গবেষক ড. এনামুল হক। বগুড়ার সোনাতলার খোদাদিলা গ্রামের বাড়িতে শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে তাকে কবর দেয়া হয়।

ড. এনামুল হকের মেয়ে তৃণা হক জানান, গ্রামের বাড়িতে নির্মিত মসজিদ প্রাঙ্গণে বাবাকে কবর দেয়া হয়েছে। বাবার আগে থেকেই এমন ইচ্ছা ছিল। সেই ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের কবরের পাশে আগে আরও একটি কবর বাঁধানো ছিল।

এর আগে সকালে বগুড়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

ওই সময় বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ড. এনামুল হকের মরদেহের পাশে পুষ্পস্তবক অপর্ন করেন।

মো. জিয়াউল হক বলেন, বাংলাদেশের জাদুঘর বা পুরাকীর্তি বলতে ড. এনামুল হকের নাম উঠে আসে। আমার নিজেরও এই পুরাকীর্তির বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। সেই সুবাদে আমি তার নামের সঙ্গে অনেক আগে থেকে পরিচিত।

দেশে প্রত্নত্বাত্ত্বিক ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সবার অগ্রজ ড. এনামুল হক। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। যা শুধু বগুড়া নয়, দেশের জন্য গর্বের বিষয় বলে মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক ছাড়াও ড. এনামুল হকের মরদেহে বগুড়া জেলা পুলিশ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের ব্যক্তিরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

বগুড়ার প্রথিতযশা প্রত্নতাত্ত্বিক ড. এনামুল হক গত ১০ জুলাই দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। এনামুল হক বগুড়ার সোনাতলার ভেলুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে বসবাস করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন। তারা বিদেশে বসবাস করেন। প্রায় সাত বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান।
মেয়ে তৃণার দেশে আসা পর্যন্ত এনামুল হকের মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা ছিল।

প্রফেসর ডক্টর এনামুল হক ১৯৩৭ সালের ১ মার্চ  বগুড়ার ভেলুরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ও ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শিল্প নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্মজীবনে ১৯৬২ সালে এনামুল হক তৎকালীন ঢাকা জাদুঘরে যোগদান করে। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যক্ষ, ১৯৬৯ সালে পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা জাদুঘরকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রুপান্তর করা হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন মহাপরিচালক হিসেবে এনামুল হক যোগদান করে। মহাপরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তাকে

১৯৯০ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

২০১৪ সালে গবেষণার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি একুশে পদক লাভ করেন। সংস্কৃতিতে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে তাকে সংস্কৃতিতে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।

সর্বশেষ প্রত্নতত্ত্বে বিশেষ অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ২০২০ সালে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ