পুলিশ কর্মকর্তার তৈরি জাল টাকা অসাধু ব্যাংকারদের যোগসাজশে যেত ব্যাংকে

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকার কারবার ও অভিনব কৌশলে ব্যাংকের টাকার মধ্যে জাল টাকা দিয়ে আসছিল একটি চক্র। এই চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন পুলিশের চাকরিচ্যুত এক কর্মকর্তা। আর তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা। তাঁদের যোগসাজশে চক্রের তৈরি করা জাল টাকা চলে যেত ব্যাংকে।

এই চক্রটির প্রধান মো. হুমায়ূন কবির (৪৮)। গতকাল বুধবার রাতে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান হাউজিং এলাকার একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম।

এ সময় গ্রেপ্তার হুমায়ূনের কাছ থেকে ১৬ লাখ জাল টাকা, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি লেমিনেশন মেশিন, একটি পেস্টিং গামের কৌটা, তিনটি টাকা তৈরির ডাইস, দুই বান্ডেল ফয়েল পেপার, দুই প্যাকেট টাকা তৈরির কাগজ ও দুইটি মোবাইল জব্দ করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবি প্রধান বলেন, এই চক্রটি ব্যাংকে টাকা জমা দিত অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে। মূলত ঈদ ও অন্যান্য উৎসব কেন্দ্রিক ব্যাংকে যখন অতিরিক্ত ভিড় হতো, সে সময় ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মূলত জাল টাকাগুলো ব্যাংকে জমা দিতেন।

গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা তাঁকে (হুমায়ুন) গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞেস করি, এই জাল টাকাগুলো কোথায় কোথায় দেন। তিনি কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকায় চক্রের এজেন্টদের কাছে জাল টাকাগুলো সাপ্লাই করতেন বলে জানিয়েছেন। আবার ব্যাংকে যখন প্রচুর ভিড় হতো তখন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিতেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, কোনো এক সময় তিনি পুলিশের চাকরি করতেন। চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তিনি জাল টাকা তৈরি করতেন। তাই বলে গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে ছাড় দিচ্ছে না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। অবৈধভাবে কেউ ধনী হতে চাইলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, তাঁরা জাল টাকা পাচারও করতেন। তাঁদের এই পাচারের সত্যতা আছে কি না, সেটিও আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা মূলত ঈদকে টার্গেট করে এই জাল টাকা তৈরি করে থাকে। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি আসন্ন পূজাকে কেন্দ্র করে মাসে ৬০ লাখ টাকা রোলিং করার টার্গেটে এখন থেকেই তারা কাজ শুরু করেছে।’

ডিবি প্রধান জানান, মোহাম্মদপুরে হুমায়ুন কবিরের ভাড়া নেওয়া বাসা জাল টাকা বানানোর কারখানা হিসেবে ব্যবহার হতো। তাঁর অন্যান্য সহযোগী পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন—ইমাম হোসেন (৩০), মো. আলাউদ্দিন (৩৫), মো. সাইফুল (৩০), মো. মজিবর (৩২) ও আলাউদ্দিন (৪২)। এঁরা পরস্পর যোগসাজশে জাল টাকা প্রস্তুত এবং বিপণন করে আসছিলেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার আসামির পিসিপিআর যাচাই করে জানা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও ৪টি জাল টাকার মামলা রয়েছে।

চক্রটির অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ