বিদ্যুৎসংকটে পাবনা বিসিকে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে

পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনা বিসিক শিল্পনগরীতে দিনের মধ্যে কয়েক দফা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। উৎপাদন সচল রাখতে শিল্পনগরীকে লোডশেডিংমুক্ত রাখার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে আবেদন জানিয়েছে পাবনা বিসিক কর্তৃপক্ষ।

পাবনা বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রফিকুল ইসলাম বলেন, পাবনা বিসিক শিল্পনগরীতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ টন খাদ্যপণ্য উৎপাদন হয়। প্রতি বছর এ শিল্পনগরী থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়, যার সিংহভাগই খাদ্যপণ্য। বিদ্যুৎ সংকটে এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই শিল্পনগরীকে লোডশেডিংমুক্ত রাখার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

পাবনা বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের অন্যতম চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ আর স্পেশালাইজড রাইস মিলের জিএম আক্তারুজ্জামান রাসেল বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার বার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে মিলের বিভিন্ন ইউনিটে কাঁচামাল আটকে যায়। পুনরায় বিদ্যুৎ আসলে মিল চালু করার আগে জমে থাকা অর্ধনষ্ট কাঁচামাল সরিয়ে পুনরায় মিলকে কর্মক্ষম করতে প্রায় এক ঘণ্টা অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়। এভাবে প্রতিদিন তিন থেকে চার বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে মিলের উৎপাদন প্রায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ব্যাহত হয়। এতে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের চালের উৎপাদন ৪০ শতাংশ কমে গেছে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়েছে তিন শতাংশ।

শিল্পনগরীর আটার কারখানা তুষার ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী আখতার হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এখন প্রতিদিন ১১ থেকে ১২ ঘণ্টার বেশি মিল চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন ১০০ থেকে ১১০ টনে নেমে এসেছে। বিসিকের ছোট ডাল কারখানার মালিক আমির হোসেন জানান, তিনি তার কারখানা প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা চালু রেখে ১০ টন ডাল প্রক্রিয়াজাত করেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে একই শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় টনের বেশি ডাল উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত শ্রমিক খরচের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ১০ শতাংশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে খাদ্যশস্য উৎপাদন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।

শিল্পনগরীর স্টেট অফিসার আব্দুল লতিফ বলেন, বিদ্যুতের চলমান সংকটের কারণে পাবনা বিসিক শিল্পনগরী এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। পাশাপাশি বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং অতিরিক্ত শ্রমঘণ্টা ব্যয় করায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে প্রায় পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ। প্রায় ১১০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত বিসিক শিল্পনগরীর ১৭২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ১৬৯টি প্রতিষ্ঠান।

পাবনার নেসকো-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল হক বলেন, নেসকো-২ এর অধীনে প্রতিদিন ২২ থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১২ মেগাওয়াট চাহিদা শুধু শিল্পনগরী এলাকার জন্য। বিদ্যুতের উৎপাদন কম হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে যখন যেভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছি, তেমনিভাবে গ্রাহকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। শিল্পনগরীতে একটি লাইন চালু রেখে আরেকটি লাইন বন্ধ করা হচ্ছে, যাতে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ