প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে সাজছে সাগরকণ্যা কুয়াকাটা

ভ্রমন করতে কার না ভাল লাগে আর সেটি যদি হয় সমুদ্রে কাছে, একই ভুমিতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার দেশের একমাত্র বেলাভূমি সমুদ্র সৈকত সাগরকণ্যা কুয়াকাটা । পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে প্রকৃতির সৌন্দর্যের অপরূপ এ লীলাভূমি অসংখ্য পর্যটকদের পদচারণায় মুখোরিত সবসময় । বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রকৃতিগতভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পটভূমি যা ঝাউবন, নারিকেল বাগান, গেওরা, ম্যানগ্রোভসহ জানা অজানা নয়নাভিরাম দৃশ্যের ছায়ায় সু-শীতল ছিলো । যেখানে অবকাশ যাপন ও প্রশান্তির আসায় দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতো পরিশ্রান্ত মানুষগুলো । নব্বই এর দশকেও যা ঠিকঠাক ছিলো । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারনে পাল্টে গেছে অনেক কিছু । মনুষ্যসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়, সাগরের ক্রমাগত প্রবল ঢেউয়ের আঘাত, উন্নয়ন কর্মকান্ডে দুর্নীতি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর উদাসীনতায় দীর্ঘ প্রশস্ত সৈকত এখন জিরো পয়েন্টে এসে ঠেকেছে । প্রকৃতি ও সৌন্দর্য পিপাসুরা মনে করেন , শুধু সাগর সৈকতে দাড়িয়ে থাকা আধুনিক হোটেল-মোটেলের কৃত্রিম সাজ সজ্জায় পর্যটকদের মন ভরবে না । এ কৃত্রিমতা নির্ভর চলতে থাকলে সম্ভাবনাময় এ সাগর সৈকত তার নিজস্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য হারাবে ।

এক সময়ে এখানে যোগাযোগ ব্যবস্হা খুব খারাপ ছিলো ! সড়ক পথ সরু এবং অনেকগুলো ফেরি থাকায় অনেক সময় ক্ষেপণ হতো । কিন্তু এখন সড়ক পথের অনেক উন্নয়ন হয়েছে । ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু , এক্সপ্রেসওয়ে ও  লেবুখালীর পায়রা সেতু, শেখ জামাল সেতৃু হয়ে নতুন রাস্তা ধরে ছুটে চলেছি আমার কুয়াকাটার পথে।  কিন্তু যার জন্য এতো আয়োজন, সেই যদি থাকে সৌন্দর্যহীন , তাহলে কিসের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মানুষ ওখানে যাবে ।  নির্মল মুক্ত প্রকৃতি আপন গতিতে প্রাকৃতিক ও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করে ডেকে নিচ্ছে প্রজাপতি, পাখি, ফুল, লাল কাঁকড়া সহ অনেক প্রাণী । বন্য পশুপাখিগুলো নতুন স্বাদের সম্মোহনে হাঁটি হাঁটি পায়ে লোকালয়ে আসতে শুরু করেছে । এছাড়া স্থানীয়রা জানান, আকাশের রঙের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাগরের ঢেউয়ে পানির রঙের পরিবর্তন তারা দেখতে পাচ্ছেন । সৈকত সংলগ্ন নোনাপানির রঙ ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তন এবং আর্কষণীয় হয়ে ওঠা এমন দৃশ্য পূর্বে কখনো দেখা যায়নি । সুদীর্ঘ সৈকতে ফুটে উঠেছে সাদা ঝিনুকের পসরা , বিলুপ্তপ্রায় লাল কাঁকড়াগুলো ছোটাছুটি করছে সৈকতের বেলাভূমিতে । কুয়াকাটা সৈকতের সন্নিকটে জেগে ওঠা চরবিজয়, জাহাজমারা ও চরতুফানিয়া সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন অতিথি পাখির অভয়াশ্রম, পাখির কলকাকলিতে মুখরিত পুরো এলাকা । মানুষের ভয়ে অভয়ারণ্যে লুকিয়ে থাকা বন্যপ্রাণিগুলো লোকালয়ে এসে ছোটাছুটি করছে। সংরক্ষিত টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলেও দেখা মিলেছে বন্য হরিণের । বহু বছরেও এমন বিরল দৃশ্য কারও চোখে পড়েনি ।পর্যটন সংশ্লিষ্টরা এমন অবিস্মরণীয় ঘটনায় মুগ্ধ । হয়তো রাতের আকাশে ফানুস উড়িয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে না কেউ কিন্তু সূর্যদয় সূর্যাস্ত কিংবা চাঁদের আবছা আলোয় অন্যান্য প্রাণীরা সারি সারি সবুজ বৃক্ষের ফাঁকে ফাঁকে উকি দেয় । হয়তো তারা বলতে চায় সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় ভরপুর এই পৃথিবী সবার জন্য সমান । এসো আমরা সবাই কেউ কারো ক্ষতি না করে মিলেমিশে থাকি ।

মানবের প্রকৃতিবিদ্বেষী আচরণে বিপর্যস্ত প্রকৃতি ও পরিবেশ যদি অভিশাপে রূপান্তরিত হয় তাহলে ভবিষৎ প্রজন্ম এর কুফলে ভোগবে । তাই অপার সম্ভাবনার এ পর্যটন কেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নে সর্বোমহলের সু-দৃষ্টি প্রয়োজন । সাম্প্রতিক কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জন্য একটি সুখবরও রয়েছে ।  হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট তৈর হচ্ছে নতুন নতুন। ছুটির দিন গুলোতে হাজার হাজার পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে আজ কুয়াকাটা সৈকত। কিন্ত সেই তুলনায় রাস্তাঘাট বা মার্কেট গুলোর তেমন উন্নতি হয়নি।  পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আগত পর্যটকদের জন্য ‘চেঞ্জিং জোন’ তৈরী করা হয়েছে।সমুদ্রে গোসল শেষে নারী-পুরুষ পোশাক পরিবর্তণ ও পর্যটকদের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সংরক্ষনের জন্য আগে কোন ব্যবস্থা ছিলোনা ।এখন থেকে নিরাপদে পোষাক পরিবর্তন এবং নির্মিত ‘লকার রুমে’ প্রয়োজনীয় মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণ করতে পারবেন।

মমিন রশীদ (লেখক ও  সাংবাদিক )

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ