রেলওয়ে মার্কেট নির্মাণে মান্নান আকন্দের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল, তাকে ঢুকতেও দেওয়া হবে না

বগুড়া রেলওয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসেন আলী রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট সুপার মার্কেট নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আকন্দের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল এবং তাকে ওই মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ওই মার্কেট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহ-সভাপতি আবু জাফর মোঃ মাহমুদুন্নবী রাসেল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন। বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ জোরপূর্বক মার্কেটে প্রবেশের চেষ্টা করে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে মাহমদুন্নবী রাসেল গত ১৪ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের পক্ষ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকালে বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায়হান কবিরের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। তিনি মার্কেটের অসমাপ্ত কাজ সমিতির অর্থায়নে সম্পন্ন করার কথা জানিয়ে বলেন, অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে হঠকারিতার কারণে যে সমস্ত ব্যবসায়ীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার দায়-দায়িত্ব আব্দুল মান্নান আকন্দের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শুকরা এন্টারপ্রাইজকেই নিতে হবে। তবে আব্দুল মান্নান আকন্দ তার বিরুদ্ধে উত্থাপন করা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে পুÐ্রকথাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোন সত্যতা নেই। আমি আগমাী পরশু দিন সংবাদ সম্মেলনে আমার অবস্থান বগুড়াবাসীর সামনে তুলে ধরবো। সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুন্নবী রাসেল রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় বগুড়ায় মার্কেট নির্মাণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রেলওয়ের কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বগুড়ায় রেলওয়ের অব্যবহৃত ১ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৭ বর্গফুট জায়গায় বাণিজ্যিক ক্যাটাগরিতে লীজ দেয়। ওই জায়গায় তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসেন আলীর নামে রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট সুপার মার্কেট নির্মাণের জন্য সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর মার্কেট নির্মাণের জন্য বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর মার্কেটটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য ওই সমিতির সঙ্গে ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আকন্দের মালিকানাধীন শুকরা এন্টারপ্রাইজের চুক্তি হয়। মাহমুদুন্নবী রাসেলের অভিযোগ চুক্তি অনুযায়ী আব্দুল মান্নান আকন্দকে শুধুমাত্র মার্কেট নির্মাণ এবং কিছু সংখ্যক দোকান বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করার এখতিয়ার দেওয়া হয়। কিন্তু দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কোন এখতিয়ার তার নেই। কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের পর পরই আব্দুল মান্নান আকন্দ উক্ত জায়গায় দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে দোকান নিতে আগ্রহী বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী মার্কেটটিতে ৯টি বøকে ১৬০ বর্গফুট, ১২০ বর্গফুট ও ৮০ বর্গফুট আকাওে মোট ৮৬১টি দোকান ঘর নির্মাণের কথা। কিন্তু আব্দুল মান্নান আকন্দ সেই প্ল্যান অমান্য করে নিজের ইচ্ছামত সাইজে যেখানে সেখানে দোকান নির্মাণ করতে থাকে। এ বিষয়ে তাকে সতর্ক করা হলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেন নি। সবশেষে ওই মার্কেটের পার্কিং স্পেসে দোকানঘর নির্মাণ করতে শুরু করলে তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং তাকে নোটিশের মাধ্যমে সতর্কও করা হয়। কিন্তু তিনি তার অবৈধ কর্মকাÐ চালিয়ে যেতে থাকেন এবং পার্কিং স্পেসে প্রায় ১০০ দোকান ঘর নির্মাণ করেন এবং সেগুলো বরাদ্দ দেওয়ার নামে অসহায় মানুষদের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া মার্কেটে রেলওয়ের পোষ্য কোটায় সংরক্ষিত দোকানসমূহের মধ্যে বেশিরভাগ দোকানই বরাদ্দপ্রাপ্তদের বুঝিয়ে না দিয়ে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। বিষয়গুলো অবহিত হওয়ার পর কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড সভায় বগুড়ায় ওই মার্কেটের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জেনারেল ম্যানেজারকে (পশ্চিম) কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তারই ভিত্তিতে রেলওয়ে নকশা বহির্ভূত অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুন্নবী রাসেল বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের কর্মকর্তারা মার্কেটের পার্কিং স্পেসে অবৈধভাবে নির্মিত দোকানগুলো উচ্ছেদ করতে আসেন। অভিযান চলার সময় আব্দুল মান্নান আকন্দ রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এক পর্যায়ে ওই মার্কেটে আমার বড় ভাইয় হায়দার আলী সরকারের মালিকানাধীন সেলিনা হোটেল ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে প্রধান বুকিং সহকারি হিসেবে কর্মরত আমার বড় ভাতিজা সেখানে গেলে আব্দুল মান্নান আকন্দের নেতৃত্বে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তার ওপর চড়াও হয় এবং দেশীয় অস্ত্র, চাকু, কাঠের বাটাম ও লোহার রড দিয়ে আগাত করে। ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ