১৭ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ ২০০৫ সালে ৪টি অনুষদের অধীনে (কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) ২০টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি আগে সরকারি জগন্নাথ কলেজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর আজ ১৭ বছর পা দিল প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে থাকছে, সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় পতাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, এবং সর্বশেষে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক। তার আগে উপাচার্যকে গার্ড অফ অনার দিবে বিএনসিসি। এছাড়াও কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরও থাকছে আনন্দ র‍্যালি, চারুকলা প্রদর্শনী, নাটক পরিবেশনা ও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। সেখানে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ারফেজ, সহজিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন করবে। ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন–২০০৫’ সংসদে উত্থাপিত হয় এবং ওই বছরেরই ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী এ প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলেতার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। সময়ের পরিক্রমায় ১৮৮৪ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম ও সেই সাথে আইএ, আইএসসি, মাস্টার্স বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ প্রতিষ্ঠানটিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয়। সময়ের ক্রমধারায় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ অর্থাৎ বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছে নানা মহৎ ও আলোচিত ব্যক্তিবর্গ। যারা বিভিন্ন সময়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং সামনে এগিয়ে নিয়েছে। এ সকল মহৎ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ, প্রখ্যাত আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বিশারদ এবং শিক্ষাবিদ, আনিসুজ্জামান , ব্রিটিশ বিরোধী নৌ বিদ্রোহের শহীদ মানকুমারী বসু ঠাকুর, সাহিত্যিক শামসুল হক, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, লেখক ও সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেতা প্রবীর মিত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও সঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবী, কবি-কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদ সাবের, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজুর রহমান, ঔপন্যাসিক আলাউদ্দিন আল আজাদ, কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসসহ আরও অনেকে। বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরাও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরি, বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি সংস্থায় চাকরি করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দিন দিন গবেষণা খাতা ও এগিয়ে যাচ্ছে তারা অর্জন করছে নানা পুরস্কার।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স প্রায় দেড় যুগ হলেও এখনো পর্যন্ত তেমন অবকাঠামো গত উন্নয়ন হয়নি। সম্প্রতি সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ২০০ একর অভিধান করেছে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ জমি অধিগ্রহণ হয়নি। হল না থাকার বিপাকে আছি শিক্ষার্থীরা যদিও সম্প্রতি একটি ছাত্রী হল হয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তেমন সুযোগ-সুবিধা পান না। তবুও তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগ্রাম করে এগিয়ে যাচ্ছে নিজ মহিমায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থীদের আশা দ্রুত জগন্নাথ একটি বড় ক্যাম্পাস পাবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে কাজ করছি। গবেষণা খাতে গতবারের চেয়ে বাজেট দ্বিগুণ করেছি। লাইব্রেরি, আইসিটিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সর্বক্ষেত্রে তারা রাখছে সফলতার ছাপ। উল্লেখ্য, বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ৬টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে । বর্তমানে ১৬ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জবি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ