সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত ও আমল

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ সুরা বাকারা কোরআনুল কারিমের দ্বিতীয় ও বড় সুরা। এ সুরায় বেশ কয়েকটি আয়াতের আমল ও মর্যাদা অনেক বেশি। তন্মধ্যে শেষ দুই আয়াতেরও রয়েছে ফজিলত ও আমল। কী সেই ফজিলত ও আমল?

আয়াতের মর্যাদা
হজরত আয়ফা ইবনু আবদিল কালাঈ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি আরজ করলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোরআনের কোন সুরা বেশি মর্যাদাপূর্ণ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ। সে আবার জিজ্ঞাসা করলো, কোরআনের কোন আয়াত বেশি মর্যাদার? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আয়াতুল কুরসি- ’আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’। সে পুনরায় বলল, হে আল্লাহর নবি! কোরআনের কোন আয়াত এমন, যার বরকত আপনার ও আপনার উম্মাতের কাছে পৌঁছতে আপনি ভালবাসেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সুরা আল বাকারাহর শেষাংশ। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর ’আরশের নীচের ভাণ্ডার থেকে তা এ উম্মাতকে দান করেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতের এমন কোন কল্যাণ নেই যা এতে নেই। (মিশকাত ২১৬৯, দারেমি)
অর্থ ও উচ্চারণসহ সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ
উচ্চারণ : আমানার রাসুলু বিমা উংঝিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহ। লা-নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহ। ওয়া কালু সামি’না ওয়া আত্বা’না গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির। লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন্না সীনা আও আখত্ব’না রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরাং কামা হামালতাহু আলাল্লাজীনা মিং কাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়া’ফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।
অর্থ : রাসুল তার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসুলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসুলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের মার্জনা করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের আমল ও ফজিলত
১. হজরত আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরাহ আল-বাকারার শেষের এ দুটি আয়াত পড়বে তা ঐ রাতে সেই ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হবে।’ (বুখারি ৪০০৮-৫০০৯, মুসলিম ৮০৮)

২. হজরত নুমান ইবনু বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব থেকে তিনি দুটি আয়াত নাজিল করছেন। সেই দুটি আয়াতের মাধ্যমেই সুরা আল-বাকারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দুটি আয়াত তেলাওয়াত করা হয়; শয়তান সেই ঘরের কাছে আসতে পারে না।’ (তিরমিজি ২৮৮২)

৩. হজরত জুবায়ের ইবনু নুফায়র রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সুরা আল-বাকারাকে আল্লাহ তাআলা এমন দুটি আয়াত দ্বারা শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নীচের ভাণ্ডার থেকে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলোকে শিখবে। তোমাদের স্ত্রীদেরও শেখাবে। কারণ এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায়। (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণ পাওয়ার দোয়া।’ (মিশকাত ২১৭৩, দারেমি ৩৩৯০)

শুধু তা-ই নয়, তাফসিরে মাজহারতে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনটি জিনিস দান করা হয়-
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ,
২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত,
৩. এ উম্মতের মধ্যে যারা শিরক করে না, তাদের কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০