যুক্তরাষ্ট্রে ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে অবস্থিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাড়ি থেকে দুই দফায় নথি উদ্ধার করে দেশটির কর্মকর্তারা। রাষ্ট্রীয় গোপন নথি বেআইনিভাবে সংরক্ষণের বিষয়টি তদন্তে একজন স্পেশাল কাউন্সিলরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড ওই স্পেশাল কাউন্সেলের নাম ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়ি থেকে গোপন নথি উদ্ধারের ঘটনার বিস্তৃত তদন্তেও একজনকে স্পেশাল কাউন্সিল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় ডেমোক্র্যাট বাইডেন তার রিপাবলিকান উত্তরসূরীর গোপন নথি নিজের কাছে রেখে দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন। এখন সেই সমালোচনার তীরে তিনিও বিদ্ধ হচ্ছেন।
এই ঘটনা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতেও কালো ছায়া ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বাইডেন ও ট্রাম্প দুজনই ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজ নিজ দলের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন।
ট্রাম্পের অধীনে মেরিল্যান্ডের শীর্ষ কেন্দ্রীয় কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করা রবার্ট হুরকে বাইডেনের সাবেক কার্যালয়ে পাওয়া গোপন নথি নিয়ে তদন্তে স্পেশাল কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন গারল্যান্ড।
কৌঁসুলি হুর বাইডেনের ডেলওয়্যারের বাড়ি ও ওয়াশিংটন ডিসিতে তার এককালের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিগুলো সেসব স্থানে অন্যায়ভাবে রাখা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখবেন।
গারল্যান্ড বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইন ভেঙেছে কিনা, হুর তা খতিয়ে দেখবেন।’
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কিছু গোপন নথি বাইডেনের বাড়ির গ্যারেজ ও সংশ্লিষ্ট কক্ষে পাওয়া গেছে। তারা এ সংক্রান্ত তদন্তে সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের আইনজীবী রিচার্ড সউবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই নথিগুলো যে অসাবধানতাবশত ভুল স্থানে রয়ে গেছিল এবং প্রেসিডেন্ট ও তার আইনজীবীরা যে ভুল ধরতে পেরে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন, বিস্তৃত পর্যালোচনায় তা উঠে আসবে বলে বিশ্বাস আমাদের।’
তার করভেট গাড়ির পাশেই যে সরকারি গোপন নথি পড়ে আছে এমনটা প্রেসিডেন্ট জানতেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেন, সবই ছিল তালাবদ্ধ গ্যারেজে।
তিনি বলেন, ‘এমন নয় যে এগুলো রাস্তায় পড়ে ছিল। মানুষ জানে, আমি গোপন নথি ও জিনিসপত্রকে গুরুত্ব সহকারেই নিই। রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল মামলাগুলোতেই সাধারণত স্পেশাল কাউন্সেল নিয়োগ দেওয়া হয়; যিনি বিচার মন্ত্রণালয় থেকে কিছু মাত্রায় স্বাধীনতা পান।’
ট্রাম্প এবং বাইডেন উভয়কেই এখন স্পেশাল কাউন্সেলের তদন্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কাছাকাছি ঘটনা হলে দুজনের ক্ষেত্রে অভিযোগ একই রকম নয়, বলছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
হোয়াইট হাউস বলছে, বাইডেনের অ্যাটর্নিরা সামান্য সংখ্যক গোপন নথি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প তার কাছে থাকা নথি জমা দেননি, শেষে গত বছরের অগাস্টে এফবিআই তল্লাশি চালিয়ে তার বাড়ি থেকে ১০০টির মতো গোপন নথি উদ্ধার করে। নথি সংক্রান্ত তদন্তে ট্রাম্প ও তার কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করেছেন কিনা, সে বিষয়ক প্রশ্নও আছে।
ট্রাম্পের কাছ থেকে পাওয়া গোপন নথি নিয়ে তদন্তে নিযুক্ত স্পেশাল কাউন্সিল ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের কাছে হারের ফল উল্টে দিতে রিপাবলিকানদের চেষ্টার তদন্তেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট পদে থাকায় বাইডেনের জন্য আইনি ঝুঁকিও কম। তিনি যেকোনো গোপন নথির গোপনীয়তা তুলে নেওয়ার বিস্তৃত ক্ষমতা রাখেন, ওভাল অফিসের হর্তাকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ না আনার নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন অবিচল থাকায় বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচার সুযোগও বেশি তার।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়া ট্রাম্পের অবশ্য এ ধরনের কোনো রক্ষাকবচ নেই।