আধুনিক প্লাস্টিকের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ফেনীতে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের কুঠির শিল্প 

ফেনি প্রতিনিধিঃ আমাদের ঐতিহ্য আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। ফনী এক সময় ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের কুটির শিল্পে সমৃদ্ধ ছিল। দেশের জলবায়ু ফেনী মানুষের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। এক সময়ে আমাদের প্রায় গ্রামীণ হাটবাজারে দেখা যেতো বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিষপত্র।
আধুনিকতার ছোঁয়া এবং প্লাস্টিকের ভিডে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ে ব্যবহারে তৈরি এসব জিনিসপত্র।
বর্তমানে এখন দেখা যায় না আগের মতো বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিষপত্র। যেসব গ্রামীণ নারী যুগে যুগে এই শিল্পকে ঠিকে রেখেছিল তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে একাজ থেকে। সমাজ, সংসারে যেসব বাঁশ-বেতের জিনিষপত্র আগে ব্যবহার হয়ে আসছিল, এখন বিকল্প হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের জিনিষ।
লেমুয়া ইউনিয়নের প্রবীণ প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্বা বলেন- এক সময় লেমুয়া,লস্করহাট, ভোর বাজার, মতো গ্রামীণ জনপদে বাঁশ বেতের সহজলভ্যতা ছিল। প্রতিটি গ্রামে ছিল বাঁশ ঝাড়, বেত ঝাড়। এখন আর এসব দেখা যায় না। স্থানীয় লোকজনের মতে আগে গ্রামীণ নারীরা ব্যস্ততম সময় পার করত ঢালা, কুলা, ধাইজ্যা, লাই খারাং তৈরিতে। তাদের হাতে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাতেন।
ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছিল এ ধরণের কুঠির শিল্প। যুগের পরিবর্তনের হাওয়ায় গ্রাম থেকে ঝোপঝাড় চলে গেছে। বিলুপ্ত প্রায় বাঁশ, বেত নামে উদ্ভিদ।
এই ব্যবসায় জড়িতরা বলছেন- এখন যেসব বাঁশ বেতের তৈরি জিনিষ পাওয়া যায় সেগুলো মূলত আসে পার্বত্য জেলার কাছাকাছি কিছু উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে। ওসব এলাকার মানুষ এখনো অভাবগ্রস্ত থাকায় নারীরা বাড়তি আয়ের আশায় এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে।
ফেনী সদরের বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে যেসব দোকানে বাঁশ বেতের তৈরি জিনিষপত্র পাওয়া যেত, এখন কিছু জিনিষপত্র পাওয়া গেলেও দাম আকাশ ছোঁয়া।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন- বাঁশ বেতের তৈরি জিনিষের উচ্চমূল্যে এখন মানুষ বিকল্প হিসেবে নিয়েছে প্লাস্টিকের জিনিষ। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এনামুল হক বলেন এখন যেভাবে ঘরে ঘরে প্লাস্টিক জিনিষপত্রে ব্যবহার বাড়ছে, এই অবস্থার মধ্যে মানুষের মধ্যে রোগবলাইয়ের ঝুঁকি বাড়বে। দূষণের শিকার হবে পরিবেশ।
ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের বাসিন্দা হাজনি বিবি বলেন, এটা আমাদের আদি পেশা। এই কাজ হলো বসা কাজ। আমি অন্য কোনো কাজ জানি না। তাই বাধ্য হয়েই বাপ দাদার পেশাতে আছি। তবে আগের মতো লাভ নেই। বাঁশের অনেক দাম। আবার প্লাস্টিকের জিনিস পত্রের কারনে এখন আর বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র নিতে চায় না।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ