বগুড়ায় উৎপাদিত তামাকজাত পণ্যের মোড়কে নেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা

ফজলুল হক ঃ বগুড়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অধিকাংশ তামাকজাত পণ্যের মোড়কে নেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী। বর্তমানে বগুড়ায় প্রায় ২০-২২টি সিগারেট, বিড়ি, গুল উৎপাদনের কারখানা বিদ্যমান থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের মোড়কে বড় আকারে চটকদারী ছবি ব্যবহার করলেও ব্যবসায়িক কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ বাণী ছোট্ট আকারে প্রকাশ করে, যা তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহারকারী সহ সাধারণের চোখ এড়িয়ে যায়। অথচ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের নিমিত্তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বিগত ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে সকল তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবাণী প্রদান বাধ্যতামূলক করা হলেও উৎপাদিত তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবাণী ব্যবহার করা হচ্ছে না। আবার ক্ষেত্র বিশেষে তা ব্যবহার করলেও আইন সম্মত ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে না। মূলত: স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় বিড়ি, সিগারেট, গুল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাচ্ছে। যা ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুস্পস্ট লঙ্ঘন।
বগুড়ায় উৎপাদিত সরিফ বিড়ি, মাস্টার বিড়ি, কবির বিড়ি, আমেনা বিড়ি, বুলু বিড়ি, সোনালী বিড়ি, যমুনা বিড়ি, আকিব বিড়ি, মানিক বিড়ি, শরীফা বিড়ি, জুঁই কিসমত বিড়ি, বাংলা বিড়ি, জয়নাল বিড়ি, ভাই ভাই বিড়ি সহ প্রায় বিশ এর অধিক বিড়ি বাজারে মিললেও এসব বিড়ির বেশির ভাগ মোড়কেই নেই ছবিযুক্ত সতর্কবাণী। শুধু তাই নয়, অনেকক্ষেত্রে আবার বিড়ি সিগারেটের প্যাকেটে মুদ্রিত ছবি আকারে এতই ছোট এবং অস্পস্ট যে, খালি চোখে দেখাই দু:স্কর। যদিও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান মতে প্যাকেটের মোড়কের ৫০ ভাগ স্থান জুড়ে ছবিযুক্ত সতর্কবাণীর বিধান থাকলেও এখন সেই বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিড়ি কারখানার মালিকরা প্যাকেটের মোড়কের এক কোণায় ক্ষুদ্রাকারে সতর্কবাণী মুদ্রিত করছে। এতে করে ধূমপান নিরোধ আইন বাস্তবায়নে সরকারের প্রচেষ্টা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ভাবে ধূমপান মুক্ত জীবন গড়তে জনগণের মাঝে সাড়া ফেলছে না। একইভাবে শহরতলীর বিপুল সংখ্যক নর-নারী যারা পান সেবনে অভ্যস্থ তারা পানের সুস¦াদু বাড়াতে রকমারী জর্দ্দা ব্যবহার করছে। এসবের মধ্যে হাকিমপুরী, বাবা, কামালপুরী, ভিজাপাতি, বুলবুলপুরী, কালাপাতি, পানবাহার, কাসিনী জর্দ্দা প্রভূতি উল্লেখযোগ্য। সরজমিনে বগুড়ার ফতেহআলী বাজার, রাজাবাজার, মুন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে এসব মার্কেটে উপরে উল্লেখিত জর্দ্দা প্রচুর পরিমাণে গুদামজাত করার পাশাপাশি দেদারচে খুচরা ও পাইকারী বিক্রি হলেও প্রশাসনের দেখার যেন কেউ নেই। ফলে ব্যাপক মাত্রায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বাহারী মোড়কে রকমারী এসব জর্দ্দা কিনে খেয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন রোগ-বালায়ে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ প্রশাসনের তরফ থেকে এসব জর্দ্দার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলে ব্যবহারকারীরা যেমন সচেতন হতো, তেমনি ভাবে তামাকজাত এসব পণ্য খেয়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও অনেক কমে যেত।

ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সুস্পস্টভাবে উল্লেখ্য রয়েছে যে, উৎপাদিত বিড়ি সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবাণী উল্লেখ না থাকলে অনুর্ধ্ব ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদ- বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। তামাক জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। আর তাই সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছে তা বাস্তবায়নে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান সমূহে কঠোর প্রশাসনিক নজরদারির পাশাপাশি বিপণনের ক্ষেত্রেও যথাযথ প্রশাসনিক তদারকির উদ্যোগ নিলেই কেবলমাত্র তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব বলে সচেতন মহল মনে করেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ