দিনাজপুরের পুতুল যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ ১২টি দেশে

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামটি এখন পুতুলের গ্রামে পরিণত হয়েছে। এতে স্বাবলম্বী হয়েছে এক হাজার নারী। সুতা আর তুলা দিয়ে তাদের হাতের তৈরি পুতুল বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপ ও আমেরিকার ১২টি দেশে সমাদৃত হচ্ছে।

পুতুলের গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঝর্ণা রানী রায় ও মনিকা রানী দাস পুতুল তৈরির প্রাথমিক ধারণা নেন এবং পরে ঢাকায় প্রশিক্ষণ নিয়ে এ কাজ শুরু করেন। সংসারের কাজের ফাঁকে পুতুল তৈরি করে ওই প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতেন। পারিশ্রমিক হিসেবে পুতুলের প্রকারভেদে বিভিন্ন পরিমাণে অর্থ লাভ করেন তারা।

এতে ঝর্ণা ও মনিকার সংসারে অতিরিক্ত আয় হতে থাকে। তাদের দেখাদেখি এলাকার অন্য নারীরা পুতুল তৈরিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলে কয়েক বছরে ওই গ্রামের সহস্রাধিক নারী পুতুল তৈরি কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন।

তাদের তৈরি পুতুলগুলোর মধ্যে স্পেস ম্যান, অক্টোপাস, ডাইনোসর, ব্যাঙের ছাতা, টেডি বেয়ার, ঝিনুক, জলপরি, ঘোড়া, কুকুর ছানা, ক্যাঙ্গারু, রঙধনু, পাউরয়েট, স্টারফিস, স্টার, চন্দ্র, সূর্য, ড্রাগন ফ্লাই, বাটারফ্লাই, ব্রকলি, ল্যাংড়া, রেইনবো, হট চকলেট, কচ্ছপ, ডাংকি, শেয়াল ইত্যাদি। বর্তমানে ওই গ্রামে হ্যান্ড ক্রুসেড (হাতে বুনন)’র দুইজন সুপারভাইজারের আওতায় এক হাজার নারী এসব পুতুল তৈরির কাজ করছেন।

আব্দুলপুর বানিয়াপাড়া গ্রামের পুতুল শিল্পী লিপা রায় জানান, আমি দুই বছর ধরে সুতা দিয়ে পুতুল তৈরি করছি। আমার প্রতিবেশী মনিকার কাছ থেকে এ কাজ শিখেছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন ২-৫টা পুতুল তৈরি করি। পুতুলের টাকা দিয়ে সংসার খরচ চালানোর পাশাপাশি ছাগল কিনেছি। ছেলে-মেয়েদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি।

পুতুল শিল্পী পুষ্প রানী রায়, আমরা এখানে এসে দল বেঁধে আনন্দের সাথে কাজ করি এবং নিজ নিজ বাড়িতে বসেও কাজের ফাঁকেও এসব কাজ করি। তাতে প্রতি মাসে ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৬শ’ টাকা পর্যন্ত উপার্যণ করি।

সুপারভাইজার ঝর্ণা রানী রায় নিজের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমার পরিবার এক সময় নিম্ন আয়ের নিচে ছিল। অনাহারে অর্ধাহারে থাকতাম। পরে এ কাজ শেখার পর কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা পেয়েছি। স্বল্প পরিসরে হলেও একখণ্ড জমি কিনে পাকা বাড়ি করেছি। এখন মাসে যা আয় হয়, তাতে আমি ভীষণ সন্তুষ্ট। আবাসিকে রেখে দুই ছেলেকে পড়ালেখা শেখাচ্ছি। তবে আশা রাখি আগামীতে বিশ্ব বাজারে দামের মিল রেখে আমাদের পুতুলের মূল্য বাড়তে পারে।

সুপারভাইজার ললিতা রানী রায় বলেন, আমরা প্রথমে বিভিন্ন ধরনের পুতুলের নমুনাসহ সুতা ও তুলা সংগ্রহ করি। সেই নমুনা আমরা কারিগরদের দেই। তারপর চাহিদা অনুযায়ী পুতুল তৈরি করাই। তারা আরও বলেন, প্রতিটি পুতুল তৈরির জন্য প্রকারভেদে ৮০-১৫০ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়।

একজন কারিগর সংসারের কাজ করে দিনে তিনটি পুতুল তৈরি করতে পারে।
এবি ক্রুসেডের স্বত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন মিজু জানান, চিরিরবন্দরে বর্তমানে দু’জন সুপাইভাইজারের তত্ত্বাবধানে সহস্রাধিক নারী সুতা দিয়ে পুতুল তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন।

তাদের তৈরি পুতুল দেশের গন্ডি পেরিয়ে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানিসহ ইউরোপের ১২টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুনা পারভীন বলেন, সুতা আর তুলা দিয়ে তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন পুতুল দেখে আমি অভিভূত। আশা রাখি তাদের এসব পুতুল তৈরি দেখে অন্য নারীরা উদ্বুদ্ধ হবেন। এতে সংসারে অস্বচ্ছলতা দূর করতে পারবেন এবং চিরিরবন্দরের নারীরা স্বনির্ভর হবেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ