হাথুরুতেই ভরসা বিসিবির

‘কড়া হেডমাস্টার’ হিসেবে সুখ্যাতি এবং কুখ্যাতি দুটোই আছে শ্রীলঙ্কান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের। কড়া এই হেডমাস্টার নিজের টেকনিক্যাল এবং টেকটিক্যাল মাস্টারমাইন্ড দিয়ে দলকে সাফল্য যেমন এনে দিতে পারেন। একই সঙ্গে হেডমাস্টারের মতো সব নিজের আয়ত্ত্বাধীন রাখতে চান বলেও রব ওঠে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য এবং ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য এমন কড়া হেডমাস্টারই দরকার বলে মনে করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। যার কারণে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে ফেরানো হচ্ছে হাতুরুসিংহেকে।

টাইগারদের জাতীয় দলের কোচ হিসেবে শ্রীলঙ্কান এই মাস্টারমাইন্ডকে ফেরানোর গুঞ্জন বেশ আগ থেকেই বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছিল। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় নাকি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হাথুরুর সঙ্গে একদফা আলোচনা করেই এসেছিলেন বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপন। তবে কিছু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না।

গত বছরের শেষ দিকে আচমকাই বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচিং পদ থেকে পদত্যাগ করেন রাসেল ডমিঙ্গো। যদিও এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের সঙ্গে চুক্তির সময়সীমা রয়েই গেছিল। তবে তখন থেকেই রব উঠে যে, হাথুরুর জন্য ডমিঙ্গোর বিদায়টা অবধারিতই ছিল। এরপর সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্নবার হাথুরুই টাইগারদের কোচ শিরোনামে সংবাদ আসলেও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছিল না।

অবশেষে বিসিবির এক বিশ্বস্ত সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে দুই বছরের চুক্তিতে হাথুরুই ফিরছেন টাইগারদের কোচ হয়ে। আসছে ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে বাংলাদেশে আসবেন এই শ্রীলঙ্কান কোচ। তার অধীনেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের দ্য ব্লুজ অ্যান্ড সিডনি থান্ডার থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন হাথুরু। আজই সেই খবর প্রকাশ্যে আসে। এরপরই জানা গেল, হাথুরু ফিরছেন দ্বিতীয়বারের মতো। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে ২০১৪ সালে প্রথমবার দায়িত্ব নেন এই শ্রীলঙ্কান কোচ।

প্রথমবার দায়িত্ব নিয়ে তিন বছরের মেয়াদে টাইগারদের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই সময় বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০১৯ আইসিসির ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নেয়। এ ছাড়াও ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশের উন্নতি ঘটে হাথুরুর আমলে।

বাংলাদেশের শততম টেস্ট ম্যাচ জয়ের নেপথ্যের নায়কও এই শ্রীলঙ্কান কোচ। এ ছাড়াও ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডদের মতো দলকে হারাতে র‍্যাঙ্ক টার্নার বানানোর পরিকল্পনাকারী এই হাথুরুই। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে এই কোচ প্রথমবারের মতো গ্রানাইট স্ল্যাবে প্রস্তুতি নিতেও পরিকল্পনা সাজিয়ে সেটি বাস্তবায়নও করেছেন।

যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে হাথুরুসিংহের প্রথম মেয়াদের শেষটা সুখকর ছিল না। ২০১৭ সালে আচমকাই বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকার সফর চলাকালীন পদত্যাগ করে বসেন এই শ্রীলঙ্কান কোচ। সেখান থেকেই মেইলে চিঠি পাঠিয়ে নিজে সরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এই কোচ। কারণ ছিল নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের দায়িত্ব নেওয়া এবং বিপুল পারশ্রমিকের হাতছানি।

হাথুরুর দুইবারই বাংলাদেশ ক্রিকেটের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যে একটি কমন বিষয় হচ্ছে, দুইবারই নিউ সাউথ ওয়েলসের দায়িত্ব থেকে সরাসরি এসেছেন বাংলাদেশের মুলুকে। প্রথম মেয়াদে হাথুরু সফলই ছিলেন বলা চলে। দ্বিতীয় মেয়াদে কতটুকু হন, সেটিই দেখার।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ