বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সীমান্ত রক্ষায় যুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। সীমান্তে পাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিজিবি। তাদের কর্ম দক্ষতা বাড়াতে বাহিনীকে স্মার্ট করে  গড়ে তোলা হবে। আজ রোববার (৭ মে) সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।   সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন।   ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সবার আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।   তিনি বলেন, বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, অত্যাধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স, এটিভি, এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল এবং এয়ার বোটসহ দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবির প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান।

নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলীর প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্য সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবির চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবির ওপর অর্পিত যেকোনও দায়িত্ব সুশৃঙ্খলভাবে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৪৬৬ রিক্রুট (জিডি) মো. সুহেল মিয়া এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকস দল কর্তৃক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আবারও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। শেষে বিজিবি’র প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবির সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখ্য, ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৫৩৯ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫০২ জন পুরুষ এবং ৩৭ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভসূচনা হলো।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ