আকিকার পশু কেমন হবে, গোশতের হুকুম কী?

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ শিশুর জন্মের পর আকিকা দেওয়া ইসলামের একটি বিধান। প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে নবজাতকের জন্য আকিকা দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করো (অর্থাৎ পশু জবাই করো) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও।’ (বুখারি: ৫৪৭২)

আকিকা ৭ম দিনে দেওয়া সুন্নত
যেকোনো দিন আকিকা করা জায়েজ হলেও ওলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা সুন্নত। কেননা, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করতে হয়, তার মাথা কামাতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। (তিরমিজি: ১৫২২)

৭ম দিনে দিতে না পারলে কি আকিকা শুদ্ধ হয় না?
সাধারণ সন্তান ভূমিষ্ঠের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। তবে যদি কেউ কারণবশত সপ্তম দিনে না করতে পারে, তবে পরবর্তী সময়ে যেকোনো দিন আদায় করতে পারবে। অর্থাৎ পরবর্তীতে সুযোগ মতো যেকোনো সময় তা আদায় করবে। (ইবনুল কাইয়িম, তুহফাতুল মাওদুদ: ৬৩ পৃ; ফতোয়া লাজনা দায়েমা: ১৭৭৬; মাজমু ফতোয়া উসাইমিন: ২৫/২১৫)

সপ্তম দিন মনে রাখার একটি সহজ পদ্ধতি হলো, সপ্তাহের যে দিনটিতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে, যেমন—শুক্রবার, পরবর্তী সপ্তাহে ঠিক এর আগের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আকিকা আদায় করলে তা সপ্তম দিনে পড়বে। (আবু দাউদ: ২৮৩৭)

আকিকা কে করবে
যিনি সন্তানের লালন-পালন কিংবা ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করছেন, তিনিই সন্তানের আকিকা আদায় করবেন। তাই প্রথমত, এই দায়িত্ব পিতার। পিতার সামর্থ্য না থাকলে মা সামর্থ্যবান হলে তিনি অথবা তাঁদের পক্ষ থেকে দাদা-দাদি, নানা-নানি আকিকা আদায় করবেন। (আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ৩০/২৭৭) অনেকের ধারণা, আকিকার জন্তু নানার বাড়ি থেকে আসতে হয়, এ ধারণা সঠিক নয়।

আকিকার পশুর সংখ্যা
আকিকার পশুর সংখ্যা কত হবে— এ নিয়ে নির্ভরযোগ্য মত হচ্ছে, ছেলেসন্তানের পক্ষ থেকে একই ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৩৬) উম্মে কুরজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ছেলের জন্য এক ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের জন্য একটি বকরি আকিকা করবে।’ (আবু দাউদ: ২৮৩৪) তবে, ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করলেও মোস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে। যদিও দুটি করা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার: ৫/২১৩, আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ৩০/২৭৭)

আকিকার পশু কেমন হবে
যেসব জন্তু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয় না, সেসব জন্তু দিয়ে আকিকাও শুদ্ধ হয় না। তাই আকিকার ক্ষেত্রে জন্তুর বয়স ও ধরনের দিক থেকে কোরবানির জন্তুর গুণ পাওয়া যায়, এমন জন্তুই নির্বাচন করতে হবে। (তিরমিজি: খ. ৪, পৃ-১০১)
পরিষ্কার ভাষায় বললে আকিকার বকরির বয়স এক বছর হওয়া শর্ত। এর কম বয়সী বকরি দিয়ে আকিকা শুদ্ধ হবে না। যেহেতু কোরবানিতে খাসি দেওয়া উত্তম, তাই আকিকাতেও খাসি দেওয়াই উত্তম। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) কোরবানির দিন দুটি শিংওয়ালা, সাদা কালো রংওয়ালা খাসি করা বকরি জবাই করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৭৯৫)

আকিকা ও কোরবানির গোশতের হুকুম একই
আকিকার গোশতের হুকুম কোরবানির গোশতের মতোই। কাঁচা ও রান্না করা উভয়টিই বণ্টন করা যাবে। সর্বস্তরের লোক তা খেতে পারবে। এমনকি নিজের মা-বাবা, নানা-নানি, ধনী-গরিব সবাই নিশ্চিন্তে আকিকার গোশত খেতে পারবে। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৩৬)
অর্থাৎ কোরবানির গোশত যেমন তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ গরিবকে দেয়া ও একভাগ আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করা উত্তম। আবার ইচ্ছে করলে পুরোটাই নিজের জন্য রাখা জায়েজ আছে। ঠিক তেমনি আকীকার গোশতেরও একই বিধান।

কোরবানির জন্তুর সঙ্গে আকিকা করার নিয়ম
একটি বড় পশুতে তিন শরিক কোরবানি হলে সেখানে আরো দু-এক শরিক আকিকার জন্যও দেওয়া যেতে পারে। তদ্রূপ কোরবানির মতো একই পশুতে একাধিক ব্যক্তি শরিক হয়ে আকিকা আদায় করতে পারবে। (দুররুল হুক্কাম: ১/২৬৬) বড় পশু তথা গরু, মহিষ, উট ইত্যাদিতে ছেলের জন্য এক শরিক আকিকা দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
তবে, যদি এক অংশেই কোরবানি ও আকিকার নিয়ত করে, তাহলে কোরবানি হবে না। বকরি, ভেড়া ও দুম্বায় একটি নিয়ত করতে হবে। আর বড় পশু কোরবানি দিলে আলাদা অংশে কোরবানি ও আকিকার নিয়ত করলে কোরবানি ও আকিকা সহিহ হবে।

আকিকার পশু জবাইয়ে কুপ্রথা
কোনো কোনো অঞ্চলে একটি কুপ্রথা রয়েছে যে যখন নবজাতকের মাথায় ক্ষুর বসানো হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে পশু জবাই করতে হবে—এ ধারণা সঠিক নয়। মাথা মুণ্ডানোর আগে-পরে যেকোনো সময় আকিকার পশু জবাই করা যাবে। হজরত আতা (রহ.)-এর এক বর্ণনা মতে, আকিকার পশু জবাই করার আগে মাথা মুণ্ডিয়ে নেওয়া উত্তম। (আল মুকাদ্দামাতুল মুমাহ্হাদাত: ১/৪৪৯)

মৃত বাচ্চার আকিকা
যেহেতু আকিকা করা হয় বালা-মসিবত দূর করার জন্য, তাই মৃত বাচ্চার পক্ষ থেকে আকিকা করা সুন্নত নয়। (আহসানুল ফতোয়া: ৭/৫৩৬)

নাম পরিবর্তন করলে নতুন আকিকার প্রয়োজন নেই
অনেকে মনে করেন যে, কোনো কারণে সন্তানের নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে নতুন করে আকিকা দিতে হবে। না, এটি সঠিক নয়। বরং নবজাতক শিশুর একবার আকিকা করা মোস্তাহাব। নাম পরিবর্তন করলে নতুন করে আকিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১২/১৬৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবীজির সুন্নতের অনুসরণে সন্তানের আকিকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ