নিরাপত্তায় আনসার: আগ্রহ দেখাচ্ছে একাধিক দূতাবাস

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতদের নিরাপত্তায় পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহারের পর একাধিক দূতাবাস এসকর্ট সুবিধা নিতে আনসার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কোনো দূতাবাস এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আনসার চেয়ে চিঠি না দিলেও মৌখিকভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে।

আনসার সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

তারা বলছে, আনসার এসকর্ট নিতে আগ্রহীদের মধ্যে বিশ্বের ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশের দূতাবাস রয়েছে। দূতাবাস থেকে চিঠি পাওয়া সাপেক্ষে আনসারের জনবল ও অন্যান্য সুবিধা দেয়া হবে।

তবে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে এই নিরাপত্তা সুবিধা নিতে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। প্রতিজন আনসার সদস্যের জন্য গুনতে হবে মাসে ৩শ’ ডলার। আর গাড়ি ব্যবহার করলে প্রতি মাসে আরও এক হাজার ডলার দিতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনসার সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকার পুলিশের এসকর্ট প্রত্যাহার করার পর আনসার সদস্যদের মাধ্যমে এসকর্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটা অর্থের বিনিময়ে।

১৮ মে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশ আনসারের মহাপরিচালকের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পরই বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছে। কীভাবে তারা এই সেবা পেতে পারে তা ওই নোট ভারবালে জানানো হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দূতাবাসগুলোতে নোট ভারবাল পাঠানোর পর একাধিক দূতাবাস আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। শীর্ষ ক্ষমতাধর কয়েকটি রাষ্ট্রের দূতাবাস আমাদের প্রশিক্ষিত সদস্যদের হায়ার করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।’

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ ইফতেহার আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাইনি। পেলে আমরা ডেপলয়মেন্ট করব। সেই প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’

সরকার ১৪ মে ৬টি দেশের রাষ্টদূতরা রাস্তায় চলাচলে পুলিশের যে বাড়তি এসকর্ট সুবিধা পেতেন তা প্রত্যাহার করে নেয়।

স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কয়েকটি দেশের মিশন প্রধান সড়কে ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের জন্য পুলিশের প্রটোকল পেতেন। পরবর্তীতে আরও কিছু দেশ এই সুবিধা চাওয়া শুরু করে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকায় এই প্রটোকলের আর প্রয়োজন হবে না। তবে কোনো দূতাবাস চাইলে অর্থের বিনিময়ে আনসারের প্রশিক্ষিত সদস্যদের নিতে পারবে।

পুলিশি এসকর্ট প্রত্যাহারের কারণ

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অন্তত ৬টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার রাস্তায় চলাচলের সময় পুলিশের এসকর্ট সুবিধা পেতেন। এই সুবিধাটা ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজে ব্যবহার হতো। কী কারণে এই এসকর্ট প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

সচিবালয়ে ১৭ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন জঙ্গির উত্থান হয়েছিল, অগ্নি-সন্ত্রাসের একটা রাজত্ব হয়েছিল এখানে, তখন চারটি দূতাবাসকে আমরা সড়কে নিরাপত্তা দিতাম। এটি কিন্তু লিখিতভাবে দেয়া হয়নি। তারাও আমাদের অনুরোধ করেনি। আমরাই তাদের দিয়েছিলাম, যাতে করে তারা কোনোরকম অসুবিধায় না পড়ে।

‘আমরা মনে করি, সেই পরিস্থিতি এখন নেই। তারপরও যদি কোনো রাষ্ট্রদূত মনে করেন যে তাদের প্রয়োজন হবে, তাহলে নতুন করে আনসার গার্ড রেজিমেন্ট তৈরি করা হয়েছে, তারাই সেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। এ জন্য অর্থ দিতে হবে। আর এই ব্যয় দূতাবাসকে বহন করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের স্থাপনা ও এর কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা স্বাগতিক (হোস্ট) দেশের দায়িত্ব এবং তা অবশ্যই পালন করতে হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পুলিশের এসকর্ট প্রত্যাহারের পরদিন ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ ছয়টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের দেয়া বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জনবল সংকট ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে অর্থের বিনিময়ে কূটনীতিকরা বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা নিতে পারবেন।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বা এর কর্মীদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণে প্রবেশ করতে যাচ্ছি না। কিন্তু এ বিষয়টির উল্লেখ করছি যে, কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, যে কোনো স্বাগতিক দেশকে অবশ্যই সব কূটনৈতিক মিশনের স্থাপনা এবং কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তার বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে হবে। একইসঙ্গে কর্মীদের ওপর যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধে সব ধরনের উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এই প্রধান উপ-মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমাদের কূটনৈতিক কর্মী এবং স্থাপনার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ