বগুড়া নিউজ ২৪ঃ জীবনে চলার পথে কখনো ধার – দেনা করতে হয়। খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদির বিশেষ প্রয়োজনে ঋণ নিতে হয়। তবে যথাসম্ভব ঋণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। রাসূল্লাহ ( সাঃ) আল্লাহর কাছে দুআ করতেন, ” আল্লাহুমা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াদ দাইনি” অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে কুফর এবং ঋণ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।
একজন শ্রোতা জিজ্ঞেসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি ঋণকে কুফরের সাথে মিলিয়ে দিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কারণ, ঋণ ভীষণ বিপদ ( তারগীব)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, পৃথিবীতে ঋণ হচ্ছে আল্লাহর নিশান! যখন তিনি কোন বান্দাকে অপদস্থ করতে চান, তখন তার ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেন (বেহেশতী যেওর)।
তাই বিনা প্রয়োজনে ঋণ করা, ঋণের উপর ঋণ করা, গোনাহের কাজে ঋণ করা এবং আত্মসাত করার ইচ্ছায় ঋণ করা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পরিশোধ করার ইচ্ছা নিয়ে কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহ তায়ালা তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঋণদাতার মাল নষ্ট ও আত্মসাত করার মনোভাব নিয়ে কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহ তায়ালা তাকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করেন (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৮৭) যতদ্রুত সম্ভব ঋণ পরিশোধ করে দেয়া উচিত। কেননা ঋণ পরিশোধ না করে মৃত্যুবরণ করলে তার রূহ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে – জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না।
গোনাহের কাজে ঋণ করা এবং আত্মসাত করার ইচ্ছায় ঋণ করা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করার ইচ্ছা নিয়ে কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহ তায়ালা তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন’।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঋণদাতার মাল নষ্ট ও আত্মসাত করার মনোভাব নিয়ে কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহ তায়ালা তাকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করেন (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ২৩৮৭) যতদ্রুত সম্ভব ঋণ পরিশোধ করে দেয়া উচিত।
কেননা ঋণ পরিশোধ না করে মৃত্যুবরণ করলে তার রূহ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে – জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না। অপর হাদীসে বারা ইবনে আজেব ( রাঃ) রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি কোন ভাইকে সাহায্য করার নিয়তে ধার – করয দিবে কিংবা পথ হারানো ব্যক্তিকে পথের সন্ধান দিবে, তার এ কাজটি একজন ক্রীতদাস মুক্ত করার শামিল ( তিরমিযি)।
ঋণ গ্রহীতা যদি সংকীর্ণ হস্ত হয়ে পড়ে, ঋণ আদায় করার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অস্বচ্ছতার দরুণ সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে তাকে অবকাশ দেওয়া – সময় সুযোগ দেওয়া উচিত।
আর সে যদি একান্ত অপরাগ হয় তাহলে তাকে ঋণ হতে অব্যাহতি দেওয়া নিজের জন্য অশেষ কল্যাণকর। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, আর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, তাহলে তাকে স্বচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দিবে। আর যদি তাকে মাফ করে দাও তাহলে সেটা তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে ( সূরাঃ বাকারা, আয়াতঃ ২৮০)। আল্লাহর কাছে মর্যাদা এবং ক্ষমা হাসিলের একটি মোক্ষম সুযোগ হলো বিনা শর্তে ঋণ দেওয়া।
অভাবীদের দান খয়রাত করার পাশাপাশি করযে হাসানা দেওয়া উত্তম। কারণ, স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছতা সবই আল্লাহর ক্ষমতাধীন। তবে ঋণগ্রহীতার জন্য জরুরী হলো, করয আদায়ের ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া এবং করয পরিশোধের ব্যবস্থা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াদা- অঙ্গীকার মোতাবেক দেনা পরিশোধ করা। কেননা, করয হলো বান্দার হক আর তা সে বান্দা- ই মাফ করতে পারে যিনি করয দিয়েছেন।
করয আদায়ের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দুআ করতে হবে। হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কেউ যদি এই দুআটি ঈমান ও ইখলাসের সাথে পাঠ করে তাহলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তায়ালা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দিবেন (তিরমিযি)।
দুআটি এইঃ আল্লাহুম্মাক ফিনী বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনী বিফাযলিকা আম্মান ছেওয়াক। অর্থঃ হে আল্লাহ! হারাম থেকে বাঁচিয়ে আপনার হালাল রুযী দ্বারা আমার অভাব পূরণ করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে আমাকে রক্ষা করুন।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ করতেন- ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুঃখ-দুশ্চিন্তা থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের প্রাবল্য (-এর শিকার হওয়া) থেকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬ ঋণ পরিশোধ করা কতটা জরুরী তা এই হাদীস থেকে সহজেই অনুমেয়।
হযরত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ)বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন, ঋণ সম্পর্কে ওহী মারফত কঠোরতা অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহর কসম! যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করে, আবার শহীদ হয় এবং জীবন লাভ করে, আবার শহীদ হয় এবং পুনরায় জীবন লাভ করে আর তার উপর ঋণের থাকে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (মিশকাত)।
হযরত আবু যর (রাঃ)বলেন, নবিজী (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ৩ ব্যক্তির উপর অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন এবং তাদেরকে খুব বেশি ঘৃণা করেন। (১) যে বৃদ্ধ হয়েও যেনা করে, (২) দরিদ্র হয়েও যে ব্যক্তি অহংকার করে, (৩) ধনী অত্যাচারী অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আজ-কাল বলে টালবাহানা করে ঋণদাতার প্রতি যুলুম করে (সহীহ বুখারী, হাদীস নংঃ ২৪০০) রাসুল (সাঃ) মৃত ব্যক্তির ঋণ থাকলে এবং তা আদায় করার মতো সম্পদ রেখে না গেলে তিনি হাযির থাকা সত্ত্বেও জানাযা পড়াতেন না।
উল্লেখ্য, এখানে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা হয়নি বরং সাধারণ জীবন চলার প্রয়োজনে করয নেয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।