জার্মানির গ্রামাঞ্চলে বিদেশি কর্মীর চাহিদা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ ভাগ্যান্বেষণে ইউরোপে আসতে চান৷ অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি খুব আকর্ষণীয়৷ ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশের ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চলেই দেখা দিয়েছে দক্ষ কর্মীর অভাব৷

জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য বাডেন ভ্যুর্টেমবার্গের রসেনস্টাইনের কথাই ধরা যাক৷ সেখানে ছোট্ট এক কোম্পানিতে কাজ করেন প্রকৌশলী কুঞ্জন প্যাটেল৷ কোম্পানির নাম রিশটার লাইটিং৷ মোট ১১০ জন কর্মী আছে রিশটারে৷ ১১০ জন এসেছেন ৩৪টি দেশ থেকে৷

ইস্ট ভ্যুর্টেমবার্গের শহর রসেনস্টাইনের বেশিরভাগ মানুষই মাঝবয়সী বা প্রৌঢ়৷ লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তরুণ-তরুণীরা বড় শহরে চলে যাওয়ার কারণেই শহরটির এখন এ কারণেই রসেনস্টাইনের কারখানাগুলোয় দেখা দিয়েছে কর্মী-সংকট৷

ভারত থেকে আসা কুঞ্জন প্যাটেল অবশ্য তারপরও রসেনস্টাইনে থাকতে পেরে খুশি৷ প্রথমত, তার কোম্পানি রিশটারে জার্মান বলা বাধ্যতামূলক নয়, ইংরেজিই প্রাধান্য পায় সেখানে, দ্বিতীয়ত, প্রচুর বিদেশি রয়েছে রসেনস্টাইন শহরে৷ ৩০ বছর বয়সী প্রকৌশলী অবশ্য ইস্ট ভ্যুর্টেনবার্গ অঞ্চলকে ভালো লাগার কারণ জানাতে গিয়ে বলেছেন অন্য কথা, প্রকৌশলীদের জন্য এলাকাটা খুব চমৎকার৷ এখানে অনেক মজার মজার কোম্পানি আছে, একেকটা কোম্পানি একেকরকম৷

সাড়ে চার লাখ অধিবাসীর ইস্ট ভ্যুর্টেমবার্গ অঞ্চলে রয়েছে তিনশ’রও বেশি প্রতিষ্ঠান৷ সব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত কর্মী থাকলে লোকে লোকারণ্য থাকতো পুরো ইস্ট ভ্যুর্টেমবার্গ৷ কিন্তু জার্মানির রাজধানী বার্লিনের চেয়ে দ্বিগুণ আয়তনের এলাকাটিতে জনবসতি কিন্তু সেই তুলনায় অনেক কম৷

ইস্ট ভ্যুর্টেমবার্গ চেম্বার অব কমার্সের মার্কুস শ্মিডট মনে করেন, বিদেশি গ্র্যাজুয়েটদের নিতে চাইলেও এসব এলাকার কোম্পানিতে চাকরির বিষয়ে তাদের আগ্রহী করে তোলা খুব কঠিন৷ বিশেষ করে সীমিত সুযোগ-সুবিধার কারণে ছোট কোম্পানিগুলো সদ্য পাশ করা বিদেশিদের খুব একটা টানে না৷

তবে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারে অন্যরকম৷ হোক না স্টুর্টগার্টের চেয়েও দূরে, তারপরও তরুণ, দক্ষ বিদেশিদের সহজেই পেয়ে যায় তারা৷ চশমা কোম্পানি সাইসের কর্পোরেট হিউম্যান রিসোর্সের প্রধান গেয়র্গ ফন এরফা’র তাই নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো দুশ্চিন্তা নেই৷ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পদে দক্ষ লোক রয়েছে- এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সব জায়গায় আমরা চাহিদামতো দক্ষ কর্মী পেয়ে গেছি৷ আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে কাজ করি বলেই তা সম্ভব হয়েছে৷

রসেনস্টাইনের মতো বাডেনভ্যুর্টেমবার্গের আরেক ছোট শহর হয়বাখেরও এখন একই অবস্থা৷ বড় শহর ছাড়া জার্মানির প্রায় প্রতিটি শহর বা গ্রামের মতো সেখানেও রয়েছে কর্মী-সংকট৷ অথচ জার্মানির মোট জিডিপির অর্ধেকই আসে ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চল থেকে৷ সাম্প্রতিক এক হিসেব অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চল থেকে বছরে মোট আয় হয় প্রায় ৩.৯ ট্রিলিয়ন ইউরোর মতো৷

তাই হয়বাখের মেয়র জয় আলেমাসুং তার শহরে আরো অনেক অভিবাসী কর্মী দেখতে চান৷ তবে তিনি মনে করেন, অভিবাসীদের জন্য জার্মান ভাষায় পটু এবং সংশ্লিষ্ট্ কাজে দক্ষ হওয়া অনেক সুবিধাজনক৷ লেখাপড়া করতে ক্যামেরুন থেকে এসে জার্মানিতেই স্থায়ী হয়ে যাওয়া জয় আলেমাসুং বলেন, কারো সঙ্গে কথা বলে যদি অন্যরকম না লাগে, তার মানে হলো অনেকটা নিজের ঘরে থাকার মতো অনুভূতি হয়েছে আমার৷

আলেনমাগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পরে চাকরিতে যোগ দেওয়া কুনজন প্যাটেলের কাছে রসেনস্টাইন এখন অনেকটা নিজের বাড়ির মতোই৷

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০