বগুড়া নিউজ ২৪ঃ করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন মাঙ্কিপক্স নামের বিরল একটি রোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্সের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চলতি মাসের শুরু থেকে এ সংক্রমণ বাড়ছে। এরই মধ্যে এ রোগ আফ্রিকার কিছু অংশে উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
পরিচিতি:
মাঙ্কিপক্স বিরল ও স্বল্পপরিচিত একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির মাঙ্কিপক্স নামের ভাইরাস দ্বারা মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত হয়।
সংক্রমণ:
এ ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় একটি আবদ্ধ বানরের শরীরে। ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আফ্রিকার ১০টি দেশে বিক্ষিপ্তভাবে এর সংক্রমণ ঘটতে দেখা গেছে।আফ্রিকার বাইরে প্রথম ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
সে সময় কিছু কুকুরের নিবিড় সংস্পর্শে রোগীরা ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছিলেন। আর এসব কুকুরের শরীরে এ ভাইরাস ঢুকেছিল ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মাধ্যমে। ওই সময় মোট ৮১ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। তবে কারও মৃত্যু হয়নি।
২০১৭ সালে নাইজেরিয়ায় মাঙ্কিপক্স কিছুটা ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, সন্দেহভাজন ১৭২ জন রোগীর কথা। তাদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ পুরুষের বয়স ছিল ২১ থেকে ৪০ বছর।
আফ্রিকার বাইরের দেশগুলোতে যেখানে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, সেখানেই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আটকে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও’র উদীয়মান রোগ বিষয়ক দলের প্রধান মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেন, “মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও) বর্তমানে যে পরিস্থিতি রয়েছে, সেটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য।”
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, “বর্তমান প্রাদুর্ভাবের কারণ সম্পর্কে জল্পনা রয়েছে যে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি হয়তো পূর্বের তুলনায় পরিবর্তিত হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
অন্যদিকে ডব্লিউএইচও’র গুটিবসন্ত সচিবালয়ের প্রধান রোসামুন্ড লুইস বলছেন, “এই গ্রুপের ভাইরাসগুলো ‘পরিবর্তিত হয় না এবং তারা মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে।”
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণ:
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও ক্লান্ত লাগা। জ্বর কমলে শরীরে দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়।ফুসকুড়িগুলো অত্যন্ত চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে খোস-পাঁচড়ায় পরিণত হওয়ার আগে এগুলো পরিবর্তিত হয় ও কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে। পরে এগুলো পড়ে যায় এবং এসব স্থানে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হতে পারে।সাধারণত সংক্রমণ একপর্যায়ে নিজে থেকেই কেটে যায়। ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে সেরে ওঠেন রোগী।
যেভাবে সংক্রমিত হয়:
কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসনালি, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে—আগে এমনটা বলা না হলেও এখন ধারণা করা হচ্ছে, যৌন মিলনের সময় সরাসরি সংস্পর্শে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।সংক্রমিত বানর, ইঁদুর ও কাঠবিড়াল এবং ভাইরাসযুক্ত বস্তু যেমন বিছানাপত্র ও জামাকাপড়ের সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে ভাইরাসটি।
কতটা বিপজ্জনক এটি:
এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের যত ঘটনার কথা জানা গেছে, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপসর্গ মৃদু হতে দেখা গেছে। কখনো কখনো লক্ষণগুলো ছিল চিকেনপক্স বা জলবসন্তের মতো। কয়েক সপ্তাহে তা নিজে থেকেই সেরে গেছে।মাঙ্কিপক্স কখনো গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। ঘটতে পারে মৃত্যুও। যেমনটা খবর পাওয়া গেছে পশ্চিম আফ্রিকায়। একজন সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসনালি, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা এখনই এ ভাইরাস দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে নেই। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা (ইউকেএইচএসএ) বলছে, ঝুঁকি এখনো কম।ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মলিকুলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল বলেন, প্রকৃত অবস্থা হলো প্রাথমিকভাবে মাঙ্কিপক্স রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন ৫০ ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ১ জন এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এখনই দেশজুড়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতিতে আমরা আছি—এমনটা মনে করা ভুল হবে।
চিকিৎসা:
মাঙ্কিপক্সের কোনো চিকিৎসা নেই, তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে গুটিবসন্তের টিকা ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে বলে প্রমাণিত। আগাম সতর্কতা হিসেবে যুক্তরাজ্য গুটিবসন্তের টিকা কিনে রেখেছে। তবে ঠিক কত টিকা সংগ্রহ করেছে, তা পরিষ্কার নয়। স্পেন কয়েক হাজার টিকা কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।