দুর্গাপূজায় ২৯ জেলাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলল ‘সম্প্রীতি যাত্রা’

বগুড়া নিউজ ২৪: আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের পাঁচটি জেলাকে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এবং ২৪টি জেলাকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।

উচ্চঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো ঢাকা, রংপুর, যশোর, চাঁদপুর ও নোয়াখালী। মানচিত্র অনুযায়ী, মাঝারি ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো গাজীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও নেত্রকোনা। দেশের অন্যান্য জেলাগুলোকে নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সম্প্রীতি যাত্রা।

সংগঠনটি জানায়, ২০১৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে পূজামণ্ডপ, শোভাযাত্রার রুট ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাগুলোর ভিত্তিতে তারা এই ঝুঁকির মানচিত্র তৈরি করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লেখক ও গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ।

মীর হুযাইফা আল মামদূহ বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেটি খতিয়ে দেখা রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। কিন্তু গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতা চলছেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রবণতার বিস্তারও ঘটেছে। বৈষম্যহীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনের পরও এর ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষিক ও সংস্কৃতিগত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। আগাম প্রস্তুতি, কার্যকর আইন প্রয়োগ, জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মন্দির, মাজার, আখড়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’র পক্ষ থেকে কয়েকটি পদক্ষেপের কথা জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সম্প্রীতি কমিটি গঠন, নজরদারি ও নথিভুক্তকরণ, গুজব প্রতিরোধে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতকরণ, দ্রুত সহায়তা কাঠামো গঠন এবং প্রতিবেদন ও নীতি-প্রস্তাব উপস্থাপন।

মন্দির, মাজার, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন, দ্রুত রেসপন্স টিম গঠন, গুজব প্রতিরোধ কাঠামো তৈরি, অভিযোগ গ্রহণে স্বচ্ছতা, প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মাহা মির্জা বলেন, যেসব ঘটনার কথা আমরা বলছি, সেগুলো ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। আমাদের মনে হয়, সরকার যদি চায়, তাহলেই মব থামানো সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার এই অপরাধগুলোর ব্যাপারে পুরোপুরি নির্বিকার।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণ-আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল সহমর্মিতার বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে। কিন্তু বর্তমানে যে বাংলাদেশ আমরা দেখছি, তা ভয়াবহ এবং সরকারের আচরণ আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত কোনো সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের তদন্ত বা বিচার হয়নি। বর্তমান সরকারও সেই ধারাবাহিকতায় চলছে। ফ্যাসিস্ট নীতির কারণেই মাজারে হামলার সংখ্যা বেড়েছে। সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া এর থেকে মুক্তি নেই।

আয়োজকেরা জানান, বিভিন্ন লেখক, সাহিত্যিক, কবি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়েছে। শিগগির দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এই প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে কমিটি গঠন করা হবে, যারা মন্দির, মাজার, ধর্মীয় স্থাপনা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিন্তক ও শিল্পী অরূপ রাহী, লেখক ফেরদৌস আরা রুমী, লেখক বাকি বিল্লাহ এবং সাংবাদিক রহমান মুফিজ প্রমুখ।

 

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফেসবুকে আমরা

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০