লালমনিরহাটে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ, প্রস্তুত ৪৬৮ মণ্ডপ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে লালমনিরহাটে বইছে উৎসবের আমেজ। শহর থেকে গ্রাম—প্রতিটি স্থানেই চলছে জমজমাট প্রস্তুতি। জেলার বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলোতে এখন চোখে পড়ছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।

আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। যা ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে।

এ উপলক্ষে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লালমনিরহাট শহরের মার্কেটগুলোতে কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। নারীদের শাড়ি, থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক, পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস, গহনা ও ঘর সাজানোর সামগ্রী কেনার হিড়িক পড়েছে। ঋতুভিত্তিক ছাড় (সিজনাল ডিসকাউন্ট) ও ক্যাশব্যাক সুবিধার কারণে বিক্রি বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শাহান শপিং কমপ্লেক্স, পাটোয়ারী শপিং কমপ্লেক্স, পৌর শপিং কমপ্লেক্স, ফ্যাশন পার্ক, চয়েস ফ্যাশন, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, একতা বস্ত্রালয়, সিটি গার্মেন্টস, আড়ং ফেব্রিক্স ও দুলাল গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দর্জির দোকানগুলোতেও ব্যস্ততা বেড়েছে।

শহরের বাটা মোড়ে কেনাকাটা করতে আসা তিলোত্তমা চক্রবর্তী বলেন, বাবার জন্য ২ হাজার টাকায় জামা-প্যান্ট, দাদুর জন্য ৮০০ টাকায় ফতুয়া কিনেছি। মায়ের জন্য শাড়ি ও বোনের জন্য পোশাক কিনতে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি।

বিক্রেতারা জানান, চাহিদা অনুযায়ী পোশাক আনার ফলে বিক্রি ভালো হচ্ছে। সন্ধ্যার পর ভিড় বেড়ে যায়।

প্রশাসনের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় মোট ৪৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬২টি, আদিতমারীতে ১১৪টি, কালীগঞ্জে ৯১টি, হাতীবান্ধায় ৭২টি এবং পাটগ্রামে ২৯টি মণ্ডপে পূজা হবে।

শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করছেন। বড়বাড়ী বাজারের শিবকালী ও দুর্গা মন্দিরের সভাপতি নিমাই চন্দ্র পাল বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় আনন্দঘন পরিবেশে পূজার প্রস্তুতি চলছে।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট লালমনিরহাট সদর উপজেলার আহ্বায়ক হিরালাল রায় বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি আমাদের সামগ্রিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে লালমনিরহাটে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্বের যে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদের গর্বের বিষয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ধারা অটুট রেখে আনন্দ ও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসব উদযাপন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট লালমনিরহাট সদর উপজেলার সদস্য সচিব ধনঞ্জয় কুমার রায় বলেন, লালমনিরহাটে অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর মতো ধর্মনিরপেক্ষ নেতা থাকায় আমাদের বিশ্বাস, দুর্গাপূজার মতো বড় ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে। তার আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রশাসনের প্রস্তুতি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই সুন্দর ধারা ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে, পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, দুষ্কৃতিকারীদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কোনো চেষ্টাই সফল হবে না। পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আমাদের নেতাকর্মীরা একযোগে কাজ করবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফেসবুকে আমরা

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০