বগুড়া নিউজ ২৪ঃ জাতীয় জাদুঘরের দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ হলো। দেশের প্রধান জাদুঘরের সংগ্রহে এলো বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত মুজিব কোট, সফেদ পাঞ্জাবি, পাজামা ও একটি টোব্যাকো পাইপ। শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমে বৃহস্পতিবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জাতীয় জাদুঘরকে স্থায়ীভাবে এসব অমূল্য স্মারক প্রদান করে। স্মৃতি জাদুঘর থেকে জাতীয় জাদুঘরে স্থায়ীভাবে কোন নিদর্শন উপহার হিসেবে প্রদান করার ঘটনা এটিই প্রথম।
জানা যায়, সরকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু স্মৃতি নিদর্শন রয়েছে। তবে মুজিব কোট, সফেদ পাঞ্জাবি, পাজামা ও পাইপ দিয়ে মহান নেতাকে বিশেষভাবে চেনা যেত। এগুলোর কোনটিই জাতীয় জাদুঘরে ছিল না। ঘাটতি পূরণে গত জুলাই মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের সহায়তা চায় জাতীয় জাদুঘর। ২৬ জুলাই জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান ম্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান বরাবর একটি চিঠি লেখেন। তাতে জাতির পিতার পাঞ্জাবি, পাজামা, মুজিব কোট, চশমা ও টোব্যাকো পাইপ স্থায়ী নিদর্শন হিসেবে পাওয়ার আবেদন জানানো হয়।
এর পর গত বুধবার গণভবনে স্মৃতি জাদুঘরের ট্রাস্টিদের নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আলোচনার এক পর্যায়ে কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান জাতীয় জাদুঘরের আবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করে এ ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত চান। জাতীয় জাদুঘরের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় জাদুঘরের প্রতিনিধিদের হাতে চারটি নিদর্শন তুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।
তবে হস্তান্তর উপলক্ষে এদিন কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল ধানম-ির জাদুঘরে যান। জাতীয় জাদুঘরের ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের কীপার এ কে এম সাইফুজ্জামানের হাতে নিদর্শন তুলে দেন ৩২ নম্বরের জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান। এ সময় জাতীয় জাদুঘরের ডেপুটি কীপার দিবাকর সিকদার ও সহকারী কীপার তাহমিদুন নবী উপস্থিত ছিলেন।
এদিন নিদর্শনগুলো খুব কাছ থেকে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ পান এই প্রতিবেদক। কালো রঙের মুজিব কোটটি বহু বছরের পুরনো হলেও তাতে কোন খুঁত বা ক্ষত নেই। রঙটাও তেমন ফিকে হয়নি। গুনে দেখা যায়, মুজিব কোটে রয়েছে ছয়টি বড় বোতাম। বোতামের রঙও কালো। সাদা পাঞ্জাবিটি হালকা ও আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি। পুরনো কাটিং। সে সময়কার গোল গলা। বুকের অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ পড়েছে। তবে কোন ছেড়াফাঁড়া নেই। পাজামার লক্ষ্যণীয় দিক এর আকার। আকারে এটি অনেক বেশি বড় এবং ঢোলা। টোব্যাকো পাইপটি পিতলের। আকর্ষণীয় টেক্সচারে ফুল ও লতাপাতার চমৎকার ডিজাইন দৃশ্যমান হয়।
জানা যায়, নিদর্শনগুলো এতদিন বিশেষ যতেœ স্মৃতি জাদুঘরের সংরক্ষনাগারে সংরক্ষিত হচ্ছিল। সেখান থেকে বের করে জাতীয় জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে চাননি কিউরেটর। তাই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরদিনই নিদর্শন হস্তানর করে উদাহরণ সৃষ্টি করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের জাদুঘরটি আসলে হাউস মিউজিয়াম। পারিবারিক আবাসন। মিউজিয়ামের জন্য ডিজাইন করা নয়। ফলে একসঙ্গে অনেক লোক ঘুরে দেখতে পারেন না। জাতীয় জাদুঘরে সেটা সম্ভব। সরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে বলে জানি। সেখানে জাতির জনকের ব্যবহার করা নিদর্শন দান করায় মিউজিয়ামের কাজটাই আসলে সম্প্রসারিত হবে।
ধানমন্ডির জাদুঘরের সংগ্রহে একই ধরনের নিদর্শন আরও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণেও জাতীয় জাদুঘরকে দেয়া সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া ন্যাশনাল মিউজিয়ামের এক্সপার্টিজ আছে। নিদর্শনগুলো ভাল থাকবে বলে আশা করা যায়। এসব দিক বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুকাল আগলে রাখা অমূল্য নিদর্শন জাতীয় জাদুঘরে স্থায়ীভাবে দান করেছেন বলে জানান তিনি।
জাতীয় জাদুঘরের পক্ষে নিদর্শন গ্রহণ করে কীপার এ কে এম সাইফুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে আমরা অনেকদিন ধরে একটা ঘাটতি অনুভব করছিলাম। নতুন করে পাওয়া নিদর্শনগুলো সে ঘাটতি পূরণ করবে। আমরা ভাবতেই পারিনি যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে, এত সহজে অমূল্য দান জাদুঘরের জন্য পাব।
এ জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিটি নিদর্শন যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হবে। আপাত বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে সেখানে এগুলো দেখার সুযোগ করে দেয়া হতে পারে। পরবর্তীতে স্থায়ী গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, জাতীয় জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু নিজেও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিলেন। জানা যায়, ১৯৭২ সালের জুন মাসে বেশ কিছু স্মৃতি নিদর্শন তিনি জাতীয় জাদুঘরে দান করেছিলেন। সে সময় জাদুঘরের দায়িত্বে থাকা ড. ফিরোজ মাহমুদ গণভবনে গিয়ে এগুলো গ্রহণ করেন। এ তালিকায় ছিল বঙ্গবন্ধুকে লেখা সাধারণ মানুষের চিঠি, মানপত্র, কাঁসার থালা, বুলেটবিদ্ধ চিত্রকর্ম, কলম ইত্যাদি। নিদর্শনগুলো এখন নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এক মাসের জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে।
একই সময় জাতীয় জাদুঘরের স্থায়ী গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা টেবিল, রিভলবিং চেয়ার, শীতল পাটি বিছানো পালঙ্ক। এসবের সঙ্গেই নতুন করে যুক্ত হবে মুজিব কোট, পাঞ্জাবি, পাজামা ও নেতার সার্বক্ষনিক সঙ্গী টোব্যাকো পাইপ।