গোমস্তাপুরে পালিত হলো ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব

বগুড়া নিউজ বিডিঃ সারাদেশ জুড়ে কনকনে তীব্র শীত। উত্তরের জেলা আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জেও শীত জেঁকে বসেছে। রাস্তা-ঘাটে মানুষের উপস্থিতিও খুবই কম। আর এমনই এক শীতের সকালের এমন প্রতিকূল আবহাওয়াতেই গীতের আসর বসেছে বাড়ির আঙিনায়। সঙ্গে পিঠা-পুলি বানানোরও ধুম পড়েছে। কেউ বানাচ্ছেন তিলের পিঠা, কেউবা তেলের। ছোট ছোট মেয়েরা এসেছে হলুদ শাড়ি পরে। এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার পূণর্ভবা নদীর তীরে অবস্থিত বাবুরঘোন গ্রামে।
শুক্রবার দিনভর এই গ্রামীণ গীত পরিবেশনের সাথে সাথে দেশীয় বিভিন্ন রকম পিঠা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন ওই গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারীরা। কলসি কাঁখে নদীতে গিয়ে পানি আনা থেকে শুরু করে গোলা থেকে ধান বের করা, সেই ধান ঢেঁকিতে ভেঙ্গে চাল বের করা, তারপর জাঁতায় চাল পিষে বাড়ির আঙিনায় দলবদ্ধ হয়ে বসে পিঠা-পুলি বানান আর গীত পরিবেশন করেন তরুণীরা। ওই দিন বিকালে গ্রামের একটি ফাঁকা মাঠে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সেখানে গান, নাচ, আবৃত্তিসহ ছিল নানান পরিবেশনা। এ উৎসবে তদারকি করেন উত্তর রহনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মমতাজ বেগম। আর তাকে সহযোগিতা করেন তার বোন শামীমা বেগম।
তেলপিঠা, তিলপিঠা, ভাপাপিঠা, পুলিপিঠা, দুধপিঠাসহ বাহারি নামের পিঠা বানানো হয় গ্রামীন পরিবেশের এই পিঠা উৎসবে। গ্রামের শিশু ও তরুণীরা প্রতি বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন বলে জানান এলাকাবাসী। আর এই উৎসবে অংশীদ্বার হতে ছুটে আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদও ও এর আশেপাশের অনেকে। তবে এবার আয়োজনে একটু ব্যাতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। কারণ এবার আয়োজনের আতিথেয়তায় অংশিদার হতে পেরে গর্ববোধ করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও আইসিটি) ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক একেএম তাজকির-উজ-জামান, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-ভোলাহাট-গোমস্তাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. জিয়াউর রহমান, গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর হোসেনসহ আরো অনেকে।
এ আয়োজন বিষয়ে মমতাজ জানান, আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি অনেকটাই বিলুপ্তির দিকে। আর এই গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ গীত ও পিঠা-পুলির উৎসব যখন হারাতে বসেছিল ঠিক তখনই প্রথমত নিজ উদ্দ্যোগে আমরা এসব রক্ষা শুরু করি। তাছাড়া গত ১০ বছর ধরে নিয়মিত এই উৎসব আয়োজন করার ফলে এখন গ্রামের মেয়েরা ৬০ রকম গ্রামীণ গীত গাইতে পারে। অনেক ধরনের পিঠা-পুলি বানাতে পারে।
এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান এই পিঠা উৎসবকে ঘিরে আনন্দের খবরে জানান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বা সংস্কৃতির অংশ হচ্ছে এই পিঠা উৎসব। আর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু শিঘ্রই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফর করবেন, সেখানে তার নিকট এই ঐতিহ্য রক্ষায় প্রকল্প হাতে নেয়ার প্রস্তাব জানানো হবে।
তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক একেএম তাজকির-উজ-জামান গ্রামীন ঐতিহ্য রক্ষা বা সংরক্ষণ করার জন্য ব্যক্তি উদ্যোগের চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, গীত ও পিঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকজ শিল্পের একটা অংশ। আর তাই এরপর থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এগুলোকে সংরক্ষণ করা এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসে এগুলোকে পরিবেশন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১