নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্যের বৈচিত্র্য একান্তভাবে দরকার জানিয়ে বলেছেন, নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। পণ্যের রং, ডিজাইন এবং চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন করতে হবে। আজ বৃহস্প্রতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বস্ত্রমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। বাজার ধরে রাখতে হলে কোন দেশে কোন ধরনের পোশাকের চাহিদা রয়েছে, তাদের পছন্দের রং কী, কোন সিজনে কোন পোশাক তারা পরে, কোন ডিজাইন কোন দেশের মানুষের পছন্দ, এগুলো খুঁজে বের করতে হবে। শুধু পোশাক শিল্প নয়, অন্যান্য শিল্পের সঙ্গেও যারা জড়িত আছেন, তারা সারা বিশ্বে বাজার খুঁজবেন। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে, সে অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে বিদেশে রফতানি করবেন। আমরা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে চাই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। যারা এ পোশাক ক্রয় করেন তারা যদি এক ডলার করেও দামটা বাড়ান তা হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা মজবুত হবে। আমি জানি না, যারা রফতানি করেন তারা এটা করেন কি না। তবে আমি যখন কোনো দেশে যাই তখন আমাদের তৈরি পোশাক এবং অন্যান্য গুণগত যেসব পণ্য আছে, সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে এসব পণ্যের কথা তুলে ধরি। তারা যেন আমার দেশ থেকে পণ্য ক্রয় করেন, সে বিষয়েও তাগিদ দেই। তবে আমি একা তুলে ধরলে হবে না। আপনারা যারা ব্যবসায়ী আছেন, তাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। পাটসহ অন্যান্য বস্ত্র খাতের গুরুত্ব জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট এমন একটি কৃষিপণ্য যা পরিবেশবান্ধব। আমরা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছি। এখন পাট দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি বস্ত্র নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। এর বিকাশে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তাঁত শিল্পও আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। মসলিনের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। এ নিয়ে নতুন করে গবেষণার কাজ শুরু করার প্রস্তুতি চলছে। বেসরকারি খাতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্ত্র খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসা দরকার। কারণ রাষ্ট্রীয় খাতে গেলেই অজানা কারণে আমরা লাভের মুখ দেখি না। জানি না এর পেছনে মূলত কী কারণ। তাই বেসরকারি খাতের দিকেই আমাদের আগ্রহ বেশি। তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারাদেশে একশটা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এসব অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। বিদেশিদের পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্পপতিরাও এখানে বিনিয়োগ করবেন। বাংলাদেশকে আমরা সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই।  তিনি বলেন, মাথাপিছু আয় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১,৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নিত হয়েছে। আমাদের জিডিপি ৮.১৫ হারে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রবৃদ্ধি যেমন অর্জন করেছি, তার সঙ্গে মূল্যস্ফিতি আমরা ৫ ভাগে নামিয়ে রাখতে সক্ষম হই।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানিমুখী শিল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিল্প পুলিশ গঠন করে দিয়েছি। যাতে নিরাপদে সব কাজ করতে পারেন সবাই। যাতে নিরাপদ কারখান গড়ে উঠতে পারে সে জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাল (শুক্রবার) মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন শুরু হবে। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ পালন করব। এ ছাড়া আগামী বছরে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২০২১ থেকে ৪১ সাল পর্যন্ত আমরা একটা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করেছি। এ ছাড়া বাংলাদেশ যেহেতু একটি বদ্বীপ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা যেন ক্ষতির সম্মুখীন না হই, সে জন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ হাতে নিয়েছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ দেশের মানুষ যেন সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেই কর্মসূচি গ্রহণ করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে প্রতিটি মানুষকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম ও মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। আজ থেকে শুরু হয়ে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বস্ত্রমেলা চলবে। জাতীয় বস্ত্র দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘বস্ত্রখাতের বিশ্বায়ন, টেকসই উন্নয়ন।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ