বগুড়া সজিমেক হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের লোকজনকে মারপিট

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রোগী সহ মুক্তিযোদ্ধাকে এবং তার পরিবারের লোকজনকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। রোবববার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মারপিটের অভিযোগ করেন বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি দক্ষিণপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হেলাল উদ্দিন। । তিনি এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। হামলাকারী ইন্টার্নদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারী সকালে আমার স্ত্রী মোছাঃ মাজেদা ইয়াসমিন (জোসনা) (৫৫) তার বুকে ব্যথার কারণে স্থানীয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (সজিমেক) হাসপাতালে অর্তি করে। তাকে ২য় তলায় ৩ নং ওয়ার্ডে এবং ৩ নং বেডে রেখে চিকিৎসা চলমান ছিল। গত ১৮ তারিখ শনিবার বিকাল ৩ টার সময় আমার মেয়ে মোছাঃ মাসুমা আক্তার এবং আমার শ্যালক মোঃ জাহিদুল রহমান রোগীর সঙ্গে দেখা করার জন্য হাসপাতালে যায়। এসময় একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা ব্যক্তিদ্বয় রোগীকে বেড ছেড়েদিয়ে বাহিরের ফ্লোরে যাওয়ার কথা বলে । এসময় আমার মেয়ে আমাকে মোবাইলে বিষয়টি জানায়। তখন আমি আনুমানিক সাড়ে ৩ টা থেকে চার টার সময় হাসপাতালে যাই। গিয়ে দায়িত্বরত ব্যক্তিদ্বয়কে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিয়ে বলি আমার রোগী এখনও অসুস্থ সে সুস্থ হলে তাকে নিয়ে যাবো। তাকে কেন বেড ছেড়ে দিতে বলছেন। তাছাড়া বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমাদের বেশকিছু সুবিধা দিয়ে আসছে। এই সময় আমার শ্যালক বেড না ছাড়ার কথাও বলে। তখন দায়িত্বরত ব্যক্তি আমার শ্যালক কে মারার জন্য চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায়। তখন আমি তাকে বলি এরকম ব্যবহার আপনি করতে পারেন না। এই নিয় কিছু কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দায়িত্বরত ব্যক্তি নিজে এসে ৩ নং ওয়ার্ডের গ্রিলের দরজা বন্ধ করে আমাকে সহ আমার পরিবারের সবাইকে আবদ্ধ করে মোবাইলে ১০/১২ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডেকে এনে প্রথমে আমাকে বলে এই বুড়াটাকে মারেক। এই সময় বেশ কয়েকজন বিভিন্ন ভাবে আমাকে মাথায় এবং পেটে আঘাত করে। তখন আমার স্ত্রী ও শ্যালক তাদের হাত হইতে উদ্ধার করার জন্য আসে। সেই সুযোগে আমি ৩ নং ওয়ার্ডের বাহিরে চলেযাই। তখন আমার স্ত্রী ও শ্যালকে উপর মারধর করিতে থাকে। উপস্থিত আমার মেয়ে তার মোবাইল ফোনে মারধরের দৃশ্য ধারন করতে থাকে। এটা দেখে আক্রমণকারীরা আমার মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে টানা হেছড়া করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে পুলিশের সহযোগীতায় মোবাইল ফোন ফেরত পাই। এই মারামারির সংবাদ শুনে আমার দুই ছেলে মোঃ মাজুের রহমান (৩১), মোকসেদুর রহমান (২৫) তারা তার মাকে দেখতে যায়। এসময় ২০/২৫ জন আক্রমণকারী পুলিশের সম্মুখে তাদেরকেও মারধর করে। তখন আমার বড় ছেলে মাজেদুর রহমান স্থানীয় পুলিশের সহযোগীতা কামনা করে আক্রমণকারীর হাত হতে উদ্ধার করতে না পেরো পুলিশের লোক বলে তোরা ওদের মেরে ফেল। পরে তাদের ব্যবস্থা করা হবে। এই কথা বলে পুলিশের লোক ঘটনাস্থল হতে চলে যায়। আমার ছেলে আক্রমণকারীদের নিকট হতে বাঁচার জন্য তার মা (রোগী) বেডে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্লাসের দরজা টানা-টানি করতে হঠাৎ দরজা ভেঙ্গে আমার স্ত্রী ডান পায়ের উপর পরলে পা কেটে অনেক রক্তপাত ঘটে। এবং ছোট ছেলেকে সবাই মিলিতভাবে অনেক মারধর করে। আমি সদর থানার সহযোগীয় অতিরিক্ত পুলিশ মারফতে সন্ধার পরে রোগীসহ পরিবারের সবাইকে থানায় নিয়ে আসি ডিউটিরত অফিসার রোগীর অবস্থা দেখে আগে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। তখন আমি রোগীকে নিয়ে স্থানীয় রেইনবো ক্লিনিকে চিকিৎসা করে বাড়ীতে নিয়ে যাই। তিনি আক্রমণকারীদে দৃষ্টান্ত মূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন জানান।
মারপিটের শিকার হৃদরোগী মোছাঃ মাজেদা ইয়াসমিন (জোসনা) জানান, ইন্টার্নরা তাদের দু’দফা মারপিট করেছেন। তাদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
বগুড়া ছিলিমপুর মেডিকেল ফাঁড়ির এএসআই আবদুল কুদ্দুস জানান, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হৃদরোগীকে নিচে না নিতে অনুরোধ করায় হাসপাতালের ইন্টার্নরা রোগি ও তার সন্তানদের মারপিট করেন। ইন্টার্নরা নিজেরা রুমের কাঁচ ভেঙে রোগির স্বজনদের দায়ি করেন। তাদের মারপিটে রোগী ও তার ৩-৪ জন স্বজন আহত হয়েছেন। এমন কি রোগির ক্যাথেটারও ছিঁড়ে ফেলা হয়।
শজিমেক হাসপাতালের সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, সুস্থ রোগীকে কার্ডিওলোজি বিভাগ থেকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে ইন্টার্নদের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে হাসপাতালের পরিচালক উপ-পরিচালক ডা. মুছা আল মানছুরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তিন কর্মদিবসের মধ্যে এ কমিটি পরিচালকের কাছে রিপোর্ট দিবেন। এছাড়া হাসপাতালের পরিচালক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার জন্য রোগীর পরিবারকে দায়ি করেছেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ