বগুড়া নিউজ ২৪ঃ ফাগুন আসতে বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। কিন্তু ফাগুন হাওয়া বইতে শুরু করার সাথে সাথেই মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের। ফুল চাষী ও যশোরের ফুল ব্যবসায়িরা এবার বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ৮০ কোটি টাকার ফুল ব্যবসার টার্গেট করেছেন।
আসন্ন বসন্ত। ফাল্গুনের দ্বিতীয় দিন বিশ্ব ভালোোবাসা দিবস। যেদিন নারীর খোপায় খোপায়, শরীর ও মনজুড়ে শুধুই রঙিন ফাগুনের সাজ সজ্জার অবয়ব।
এ দিবস দুটির বাজার ধরতে এখন বেজায় ব্যস্ত যশোরের ফুলচাষীরা। তাদের কাছে ফেব্রয়ারি মাস ফুল ব্যবসায় উৎসব হিসেবেও বিবেচিত। এ সময়কে কেন্দ্র করে এখানকার ফুল ব্যবসায়ীদের থাকে বিশেষ প্রস্তুতি ও টার্গেট।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি ও যশোরের ফুল ব্যবসায়িরা এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা টার্গেট করেছেন। যশোর জেলার সকল চাষী ও ফুল ব্যবসায়িদের সম্মিলিত টার্গেট এটি।
যশোরে প্রায় সাত হাজার ফুল চাষি ৩৬০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষে সম্পৃক্ত। এখানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্লাডিওলাস ফুল। মোট চাষকৃত ফুলের শতকরা ৪০ ভাগ চাষ গ্লাডিওলাস। ২০ ভাগ চাষ হয় রজনীগন্ধা ফুল। গোলাপ চাষ হয় শতকার ১৫ ভাগের মত।
এখানকার চাষিদের উৎপাদিত জারবারা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কোলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১২ প্রকার ফুল সারাদেশে মানুষের মন রাঙায় বছরের পর বছর ধরে।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, শার্শার নাভারণ, নির্বাসখোলা এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার কীটনাশক, আগাছা পরিস্কার করাসহ ফুলের আনুসাঙ্গিক পরিচর্যায় ব্যস্ত ফুলচাষিরা। তাদের লক্ষ্য বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস। আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসও এ মাসে। সেখানে তাদের টার্গেট আর একটি।
সামনে ফুলের বড় বাজার, তাইতো বাজার ধরতে সকাল-বিকাল ফুলের পরিচর্যা করছেন এই ফুলচাষি। গদখালিতে কথা হয় ফুলচাষি আশরাফের সাথে। তিনি বলেন, চার বিঘায় গোলাপ, দুই বিঘায় জারবারা ও ১ বিঘা গ্লাডিওলাস ও রডস্টিক চাষ করেছেন।
আশরাফ আরো বলেন, আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেয়া যায় এ কথা মাথায় রেখেই তাদের চাষ পরিকল্পনা।
প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ চার টাকার মতো। ৭-৮ টাকা বিক্রি করা গেলে ভালো মুনাফা হবে বলে জানান তিনি।
আশরাফ আরো বলেন, ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সফলভাবে ফুল চাষ করে যাচ্ছেন।
নাভারণের ফুল চাষি আলম বলেন, তিনি ফুল ব্যবসার সাথে সাথে ফুল চাষও করছেন। তার চাষের মধ্যে জারবারা, গাঁদা, জিপসি, রজনীগন্ধাসহ বেশ কয়েকটি ফুল লাভজনক হয়েছে। কিন্তু তার জারবেরা ফুলে মাকাল পোকা আক্রমণ করেছে। সেই সাথে সাদা মাছির উপদ্রব আছে যথেস্ট।
ফুলচাষি আলম বলেন, কৃষি কর্মকতাদের পরামর্শ মতো কীটনাশক দিয়ে এই পোকা-মাকড়ের বিস্তার নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত দু-তিনমাস ব্যবসাটা কিছুটা খারাপ গেছে। সময়মতো সামনের দিবসগুলোতে যদি বাজার ধরতে পারি তাহলে ৭/৮ লাখ টাকার মতো ফুল বিক্রয় করতে পারবো।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলাসহ এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০-৭৫ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। শুধু দেশে নয়, এখন এই ফুল দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ফুল চাষ, ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩০লাখ মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।
আব্দুর রহিম বলেন, এই ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সারা বছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষিরা ফুল চাষ করে থাকেন।
আপডেট টাইম : বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০, ২১১ বার পঠিত
Please follow and like us: