বগুড়ায় বন্ধুকে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষনের পর চুল কেটে গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ায় এক গৃহবধুকে তার স্বামী বন্ধুকে দিয়ে ধর্ষনের পর মাথার চুল কেটে গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আশংকাজনক অবস্থায় ওই গৃহবধুকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর স্বামী ও অজ্ঞাত বন্ধু পলাতক রয়েছে।
নির্যাতিত গৃহবধু ( সামিয়া আক্তার আইভী) (২৪) জানান, স্কুলে পড়া অবস্থায় বগুড়ার গাবতলি উপজেলার মালিয়ানডাঙ্গা দক্ষিনপাড়া গ্রামের তোজাম্মেলের পুত্র রফিকুল ইসলামের প্রেমে পড়েন। সে সময় রফিকুল একটি বেসরকারী পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী ছিলো। পরিবারের অসম্মতিতে তারা বিয়ে করেন প্রায় ৯ বছর আগে। বিয়ের পর তারা শহরের চকলোকমান এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। রফিকুল একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসাবে কর্মরত রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনিও একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যান হিসাবে কাজ করতেন। কিছুদিন ধরে তাদের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। তাদের ৮ বছরের একটি সন্তানও রয়েছে। গৃহবধুর অভিযোগ, তার স্বামী তাকে তালাক দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় জানুয়ারি মাসে রফিকুল তাকে মারপিট করে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রেখে গিয়েছিলো। পরে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় সে সময় তিনি উদ্ধার পেয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন। এর পর থেকে স্বামী রফিকুল বাড়িতে আসতো না। শনিবার দুপুরের কিছু আগে ওই গৃহবধু বাড়িতে একাই ছিলেন। এসময় তার স্বামী এক বন্ধুকে নিয়ে প্রাচীর টপকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। প্রথমেই তার মুখ চেপে ধরে ঘরের ভিতরে নেয়া হয়। সেখানে হাত ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে মারপিট করা হয়। এর পর রফিকুল তার স্ত্রীকে শায়েস্তা করতে বন্ধুকে ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে পাহাড়ায় থাকে। গৃহবধুর অভিযোগ এসময় স্বামীর বন্ধু তাকে ধর্ষন করে। পরবর্তীতে দু’ জন গৃহবধুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেøড জাতীয় কিছু দিয়ে একাধিক আঘাত করে। এক পর্যায়ে তার স্বামী মাথার চুল কেটে দেয় এবং বোতলে থাকা এসিড জাতীয় পদার্থ শরীরে ঢেলে দেয়ার পর আগুন দিয়ে দু’জনই পালিয়ে যায়। নৃশংস নির্যাতনের শিকার গৃহবধু কোন ভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। তার মা ও ভাই একই এলাকায় থাকেন। খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে তারা বগুড়া (শজিমেক) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
গৃবধুর মা আয়মা বেগম জানান, তার মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করলেও পরে পরিবারের পক্ষ থেকে মেনে নেয়া হয়েছিলো এবং চকলোকমান এলাকায় মেয়ে জামাই ভাড়া বাসায় থাকতেন। গৃহবধুর ভাই রবিন হোসেন জানান, তার বোনের ওপর নির্যাতনের খবর শুনে তিনি বাড়িতে আসেন। তিনি জানান, ঘটনার সময় তার বোনের শিশু সন্তান স্কুলে ছিলো।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী বলেন, ঘটনা একটি ঘটেছে এটা সত্য। ওই ঘটনার পেছনে কোন ঘটনা আছে কিনা, স্বামী জড়িত কিনা কিংবা অন্যকেউ ঘটনার সাথে যুক্ত কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। অধিকতর তদন্ত ছাড়া এমূহর্তে কে অপরাধী কিছুই বলা যাচ্ছেনা। কাল পরশুর মধ্যে বিষয়টি পরিস্কার করা সম্ভব হবে।
বগুড়া শজিমেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধুকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের ৪ নং কেবিনে রাখা হয়েছে। পরে তাকে গাইনী ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ