সাগরে যে জাহাজটি হয়ে উঠছে ভাইরাসের আস্তানা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি বিপদ তৈরি করেছে কোনো দেশ বা অঞ্চলে নয়, বরঞ্চ সাগরে ভাসমান একটি জাহাজে। এ মাসের চার তারিখে পর্যটক ভর্তি ব্রিটিশ পতাকাবাহী এই প্রমোদ জাহাজটিতে ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়ার পরপরই এটিকে ইয়োকোহামায় নোঙর করা হয়। চেষ্টা চলছে থাকে কোনোভাবেই যেন অন্য যাত্রী বা ক্রু সংক্রমিত না হন।

সে সময় ঔ জাহাজে যাত্রীর সংখ্যা ছিল ২,৬৬৬ জন যারা ৫৬টি দেশের নাগরিক। নাবিক এবং অন্যান্য কর্মচারীরা ছিলেন মোট ১০৪৫ জন।

তখন থেকেই তাদেরকে ডাঙায় নামতে দেয়া হচ্ছেনা। জাহাজের ভেতরেও কেবিনের ভেতর একরকম অবরুদ্ধ সময় কাটাতে হচ্ছে যাতে যতটা সম্ভব এক অন্যের সংস্পর্শে না আসতে পারে।

যাদের শরীরে যখনই করোনাভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, সাথে সাথে তাদের তীরে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না ভাইরাসের বিস্তার।

প্রতি ঘণ্টায় নতুন করে নতুন করে চার থেকে পাঁচজনের শরীরে করোনা ভাইরাস ঢুকছে। প্রতিদিনই নতুন করে কয়েক ডজন যাত্রীর শরীরে এই ভাইরাস বাসা বাঁধছে।

আজও (মঙ্গলবার) জাপানের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ডায়মন্ড প্রিন্সেসে নতুন করে ৮৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ নিয়ে প্রমোদ জাহাজটিতে গত ১৪ দিনে ৫৪২ জন যাত্রী এবং ক্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জাপানের কর্তৃপক্ষ।

ডায়মন্ড প্রিন্সেসে শেফ (বাবুর্চি) হিসাবে কাজ করেন বিনয় সরকার। হোয়াটস আ্যপে তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, যত দিন যাচ্ছে জাহাজে যাত্রী এবং ক্রুদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে যে কে কখন আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. অ্যান্টনি ফাওচি সোমবার খোলাখুলি বলেছেন, কয়েক হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রেখে যেভাবে জাহাজটিতে ভাইরাস আটকানোর চেষ্টা চলছে, তা কাজ করছে না।

সম্ভবত সে কারণেই একের পর এক দেশ ঐ জাহাজে আটকে থাকা তাদের নাগরিকদের নিয়ে যেতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ঐ জাহাজে তাদের ৩৮০ জন নাগরিকের অধিকাংশকেই সোমবার বিশেষ একটি ভাড়া বিমানে করে নিয়ে গেছে।

ক্যানাডা আজ (মঙ্গলবার) জানিয়েছে তারাও একটি বিমান ভাড়া করেছে। জাহাজে ২৫৬ জন কানাডার নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়া একটি বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে তাদের চারজন নাগরিককে নিয়ে যেতে। অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনও তাদের নাগরিকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।

বিনয় সরকার বলেন, সম্ভবত বিদেশীদের কাছ থেকে কিছুটা চাপ তৈরি হওয়ার কারণে গতকাল (সোমবার) থেকে জাপানিদের কাছ থেকে অনেক বেশি তৎপরতা চোখে পড়েছে।

“কয়েকশ সৈন্য জাহাজে উঠে পুরোদমে স্যানিটাইজেশনের কাজ করছে। বিশেষ করে করে যেসব যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন যারা তাদের ছেড়ে যাওয়া কক্ষগুলো জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছে সৈন্যরা।”

কবে খালি করা হবে ডায়মন্ড প্রিন্সেস

জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জাহাজের সব যাত্রী এবং ক্রুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয়েছ, তবে কিছু পরীক্ষার ফল পেতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

মন্ত্রী বলেন, ১৯ তারিখ থেকে শুরু করে ২১ তারিখের মধ্যে যাত্রীদের নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সমস্ত যাত্রী ও ক্রুকে আলাদা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, : “আপনি এবং আপনার কক্ষের সহযাত্রীর শরীরে যদি কোনো ভাইরাস না পাওয়া যায়, শরীরে কোনো লক্ষণ না থাকে তাহলে আপনি জাহাজ ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।”

তবে হাজারেরও বেশি ক্রুকে আরো কিছুদিন জাহাজে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

বিনয় সরকার জানান, তাদের জানানো হয়েছে যে যাত্রীরা নেমে গেলে ক্রুদের আলাদা আলাদা ঘরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। এসময় তাদের কোনো কাজ করতে হবেনা। “জাপানিরাই সব কাজ করবে। বাইরে থেকে ইতিমধ্যেই সবার জন্য খাবার পাঠানো শুরু হয়েছে।”

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ