আমরা দুর্ভাগা জাতি, নিজেরাই খাবারে বিষ মেশাই : হাইকোর্ট

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বিদেশ থেকে আমদানি করা ফলে রাসায়নিকের মাত্রা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থলবন্দরে দীর্ঘদিনেও ‘কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট’ স্থাপন না হওয়ায় হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আদালত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভেজাল ফলমূল আর খাবার খেয়ে মানুষের কিডনি শেষ হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। আমাদের ব্যবসায়ীরাই খাবারে ভেজাল মেশায়। কেমিক্যাল মেশায়। আমরা এমন এক দুর্ভাগা জাতি যারা নিজেরাই নিজেদের খাবারে ভেজাল আর কেমিক্যাল নামক বিষ মিশাই।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ মন্তব্য করেন।

কেন সকল স্থলবন্দরে ‘কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট’ স্থাপন করা যাচ্ছে না তার ব্যাখ্যা দিতে এনবিআরের আইন কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী হাজির হলে তাকে উদ্দেশ্য করে আদালত এ কথা বলেন। আদালত ‘কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট’ স্থাপন বিষয়ে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ওইদিন পরবর্তি আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

বুধবার রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। এইচআরপিবির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এমআর হাসান।

বুধবার শুনানিকালে এনবিআরের কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, দেশের ১৩টি বন্দরের মধ্যে ৪টিতে কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট রয়েছে। অন্য বন্দরগুলোতে বসাতে একটু সময় লাগবে। এ সময় আদালত বলেন, বন্দর থেকে তো লাখ লাখ টাকা ট্যাক্স নিচ্ছেন। তাহলে এগুলো বসাতে দেরি কেন? আমরা তো অনেক আগেই আদেশ দিয়েছি। এখন এসে বলছেন, আরো সময় লাগবে। জনগণ আর কতদিন এরকম কেমিক্যালযুক্ত ফল খাবে? জনগনকে জিম্মি করা চলবে না। জনগণের স্বাস্থ্যের দিকটা অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাই যে সকল বন্দরে এখনো কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট নেই সেখানে অতি দ্রুত তা স্থাপন করতে হবে। এর আগ পর্যন্ত আপাতত বিএসটিআই’র সহযোগিতায় আমদানি করা ফলের পরীক্ষা করতে হবে।

হাইকোর্ট গতবছর ২৩ জুন এক আদেশে বিদেশ থেকে আমদানি করা ফলে রাসায়নিকের মাত্রা পরীক্ষার জন্য দেশের সকল বন্দরে যন্ত্র বসাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেন। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। এই নির্দেশ বাস্তবায়ন না করার বিষয়টি বুধবার আদালতের নজরে আনা হলে আদালত এনবিআরের কাছে ব্যাখ্যা চানতে চান।

এর আগে এইচআরপিবির করা এক রিট আবেদনে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে হাইকোর্ট আমদানি করা ফল-এ রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে স্থল ও সমুদ্র বন্দরসহ সকল আমদানি পয়েন্ট-এ ফল পরীক্ষার ব্যবস্থা (কেমিকেল টেস্টিং ইউনিট) চালু করার নির্দেশ দেন। ফল-এ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া কাচা আম পাকাতে কেমিকেলের ব্যবহার বন্ধের জন্য ৬ মাসের মধ্যে একটি গাইডলাইন তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট আদেশ দেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ