করোনা ছড়িয়ে পড়া রুখতে পারে ‘হাসপাতাল জাহাজ’

বগুড়া নিউৃজ ২৪ঃ কোভিড ১৯ করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা ভেঙেচুরে তছনছ করে দিচ্ছে বিশ্ব। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবার খুঁটি। একে রোখার উপায় অজানা। মহামারির মৃত্যুগ্রাসে অসহায় বন্দি মানুষ। এ যেন মৃত্যুর অপেক্ষায় বেঁচে থাকা। প্রাণঘাতী এই মহামারির প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলি কিভাবে দ্রুত মহামারির হাত থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করা যায় সেটার উপায় খুঁজছেন। ধারণা করা হচ্ছে করোনার চূড়ান্ত আঘাতে বিশ্বজুড়ে তীব্র স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে। কিভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায় তার একটা কার্যকরি সমাধান হতে পারে ‘হাসপাতাল জাহাজ’।

আলেগো ডেভলপমেন্টের সিইও ক্যাপ্টেন সন্ড্রে সানডবাই মেরিটাইম জার্নালকে জানিয়েছেন, তারা ‘ক্যাটামারন’ নামের ৩৬ মিটার বাই ১৯ মিটারের জাহাজের তিনটি বদ্ধ ডেকে প্রায় ২০টি অপারেটিং রুম এবং চিকিৎসা সুবিধা তৈরি করার কাজ শুরু করেছেন।

সেখানে ইমার্জেন্সিতে দ্রুত মেডিকেল সেবা দেওয়ার জন্য একটি প্যারামেডিক গাড়ির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে নীচে। জাহাজটি ডিজেল / বায়োফুয়েল দুটি পদ্ধতিতেই চালানো যাবে। এছাড়া একটি শক্তিশালী জেনারেটর রয়েছে, যদি তীরে সংযোগ না পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে জেনারেটর থেকে হাসপাতালে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। জাহাজের উপরের অর্ধেক ডেকে একটি হেলিপ্যাডের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতে যদি প্রয়োজন হয় এটা ব্যবহার করা যাবে।

যাইহোক, অন্যান্য হাসপাতালের সঙ্গে এই জাহাজের বড় পার্থক্যটি হচ্ছে এটি প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করা যেতে পারে। এটি ৪০ ফুটের হাই-কিউব করটেইনারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি প্রয়োজন হলে এর ডেকটি হল হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। উন্মুক্ত ডেকে প্রয়োজন হলে আরও কয়েকটি বিভাগ চালু করা এবং সংশোধন করা যাবে। অতিরিক্ত প্রপালশন মডিউল দ্বারা এর শক্তি বৃদ্ধি করা যায়।

যদিও এটি এখনও অপারেশনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না, স্যান্ডবাই হিসাবে রাখা হয়েছে। এটি বন্দর-পোতাশ্রয়স্থল বা অভ্যন্তরীণ নৌপথেও চলাচল করতে পারে। করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে এ ধরণের হাসপাতাল জাহাজ নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন সানডবাই। এটাই হতে পারে আইসোলেশনের সবচেয়ে উত্তম সমাধান।

তিনি বলেন, ধারণাটি হয়তো অর্থনৈতিকভাবে একটু ব্যয়বহুল, তবুও এমন ইমার্জেন্সিতে এটা করলে জনপদে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে। বিপর্যয় থেকে হয়ত মানবজাতী রক্ষা পাবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর ২ দশমিক ১ মিটার গভীরতার পাটাতনটি অল্প গভীরতার জলপথেও অনায়াসে চলাচল করতে পারবে। এটা বিশ্বের এমন সব স্থানে স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারবে যেখানে ভালো রাস্তাঘাট নেই। উদাহরণস্বরূপ কঙ্গোর কথাই ধরুন, দেশটিতে মাত্র ১৫০০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। তবে ১৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি নদীপথ রয়েছে।

এছাড়া, কোন কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে একটি আইএসও স্ট্যান্ডার্ডের কনটেইনার মাধ্যমে এটির বিদ্যমান অবকাঠামো সহজেই পরিবহন করা যাবে। এমনকি ইয়ার্ড ছাড়াই এটা একত্রিত করা যায়, এমনকি সমুদ্র সৈকতেও।

এই ধরণের জাহাজ আপদকালীন স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবেলা ছাড়াও টিকাদান এবং শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতেও ব্যবহার করা যাবে। উন্নয়নশীল দেশ ও অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রাথমিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এই ধরণের জাহাজ।

এ ধরণের জাহাজ বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত জানিয়ে ক্যাপ্টেন সানডবাই বলেন, ‘আমরা এ ধরণের জাহাজ তৈরি করতে প্রস্তুত,আলেগো এটি বাস্তবায়নের জন্য অংশীদার এবং মূলধনের সন্ধান করছে। আমরা এরই মধ্যে একটি জাহার তৈরি সম্পন্ন করার পথে রয়েছি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ