শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শেরপুরে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ ঠেকাতে প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়মিত বসছে সাপ্তাহিক হাট-বাজার। এমনকি এসব হাট-বাজারে ঢল নামছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। তারা ইচ্ছেমত বিচরণ করায় সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও তা মানছেন না কেউ। পাশাপাশি সাধারণ ছুটিতে ঢাকা থেকে আসা লোকজন দলবেঁধে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছেন। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে স্থানীয় কতিপয় তরুণ-যুবক একাধিক সড়কে বাঁশের বেড়া দিয়ে লক ডাউন ঘোষণা করে ভেতরে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। এত করে সচেতন মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬এপ্রিল) সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পৌরশহরের বারোদুয়ারীপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার ও সোমবার সাপ্তাহিক হাট বসে। এছাড়া উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় শনিবার ও বুধবার এবং উপজেলার জামাইল ও ছোনকা বাজার এলাকায় মঙ্গলবার ও শুক্রবার বসে সাপ্তাহিক হাট। পাশাপাশি শহরের রেজিষ্ট্রি অফিস, বিকাল বাজার, সকাল বাজার, শেরুয়া বটতলা এলাকায় বসছে দৈনিক বাজার। সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়মিত বসা এসব হাট-বাজারে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটছে। নানা শ্রেণীপেশার এসব মানুষ এভাবে অবাধে হাট-বাজার করায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। গতকাল বারোদুয়ারি হাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ও মহাসড়কে বিভিন্ন যানবাহনে লোকজন গাদাগাদি করে হাটে ছুটছেন। তারা ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, রিকসাসহ ছোট-ছোট যানবাহনে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হাটে আসছেন। এরমধ্যে ঝুঁকির মধ্যে থাকা ঢাকা ফেরত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। তাদের সংষ্পর্শে আসায় গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এরপরও থেমে নেই এসব হাট-বাজারের ইজারাদারগণ। তারা নিয়মিতভাবে বসাচ্ছেন সাপ্তাহিক হাট। চলছে সকাল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত। অথচ এসব হাট-বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না।
হাটে আসা দোকানি রইচ উদ্দিন বলেন, হাটতো বন্ধ করা হয়নি। তাছাড়া লোক সমাগম প্রায় আগের মতোই। বেচা-বিক্রিও হচ্ছে। বাড়িতে বসে থাকলে তো আর চলবে না। সংসার চালাতে হবে। তাই হাটে না এসে উপায় কী। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উপজেলা কমিটির সভাপতি নিমাই ঘোষ জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রামণের বিষয়ে সর্তকতা জারির পরও কেউ তা মানছেন না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ হাট-বাজারগুলোতে এসে অবাধে হাত মেলাচ্ছেন। টাকা গণনা করছেন। ফলে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই কেবল করোনার সংক্রামণ ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে হাট বসানো সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে উপজেলার বিভিন্ন হাট ইজারাদারদের মধ্যে কেউ কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে করনীয় সম্পর্কে মাইকে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। এরপরও জনগণ সরকারি নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে মানছেন না। তবে তাদের ঘরে রাখতে সব ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।