রাণীনগরে ইরি-বোরো ধানে কাটায় শ্রমিক সংকটের আশংকা

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : খাদ্য ভান্ডা হিসেবে খ্যাত ধান উৎপাদনের জেলা নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে দিগন্ত জুড়ে ইরি-বোরো পাকা ধানের সোনালী শীষে ভরা। মাঠ জুড়ে ধানের সোনালী রংয়ের ঝিলিকে বলে দিচ্ছে প্রান্তিক কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা ইরি-বোরো ধান চাষের দৃশ্য। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের ভাল ফলনের বুকভরা আশা করছে চাষিরা। ইতিমধ্যেই এলাকা ভেদে ধান কাটা শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের আতংক আর লকডাউনের কারণে বাহিরের জেলাগুলো থেকে স্বাভাবিক ভাবে শ্রমিক আসতে না পারায় মাঠ ভরা পাকা ধান নিয়ে শ্রমিক সংকটের আশংকা করছেন চাষীরা। এর সাথে যোগ হয়েছে গত তিন দিন ধরে বৈশাখ মাসের মাঝারি ধরণের ঝড় বৃষ্টি আর বজ্রপাত। পশ্চিম আকাশে কালো মেঘ দেখলেই কৃষকদের আতংক আরো বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি বিঘা পাকা ধান কাটতে ৪হাজার টাকার মতো খরচ হলেও চাহিদা মতো শ্রমিক না থাকায় ধান কাটা নিয়ে শংকায় রয়েছে চাষীরা। তার পারও করোনা ভাইরাস থেকে এলাকা নিরাপদ রাখতে কৃষকরা স্থানীয় শ্রমিকের উপরই ভরসা করতে চায়। সেই লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম এমপি’র নেতৃত্বে ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি ও জন প্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন।
রাণীনগর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরা ধান চাষের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫ শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে রাণনীগর বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কতৃপক্ষের গভীর নলকূপ ২ শ’ ৬২ টি, বিদ্যুৎ চালিত ব্যক্তিগত ১ শ’ ২৫টি, ডিজেল ৯৮ টি, অগভীর বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত ৩ হাজার ৩ শ’ ৪৬টি, নদী থেকে এলএলপি বিদ্যুৎ চালিত পাম্প ২৬ টি’র মাধ্যমে আবাদি ইরি-বোরো ধান ক্ষেতে সেচ প্রদান করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সঠিক সময়ে চারা লাগানো নিবিড় পরিচর্যা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, যথা সময়ে সেচ দেওয়া ও সার সংকট না থাকায় উপজেলায় চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। ইতি মধ্যে মাঠে মাঠে এখন ধান কাটা শুরু হয়েছে।
উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম জানান, আমি চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। সেচ সংকট না থাকা, কৃষি অফিস থেকে উপযুক্ত সময়ে সার প্রয়োগের পরামর্শ ও সঠিক সময়ে লাগানোর কারণে ধান ভালো হয়েছে। ইতি মধ্যে আমার সব ধান পেকেছে। এলাকার শ্রমিকদের নিয়ে আপাতত ধান কাটা শুরু করলেও অন্য জেলা থেকে যে লোকগুলো আসতো করোনা ভাইরাসের কারণে তারা আসতে চাচ্ছেনা। তাই ধান কাটা নিয়ে শ্রমিক সংকটের আতংকে আছি।
উপজেলা কৃষি আফিসার কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান চাষ হয়েছে। শেষ মহুর্তে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাণীনগর উপজেলায় ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। ইতি মধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ৩০ শতাংশ ধান পেকে যাওয়ায় কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে চাষীরা যাতে শ্রমিক সংকটে না পরে সেই জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ধান কাটা মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কেউ চাইলে এই সুযোগ নিতে পারে। সপ্তাহ খানিকের মধ্যে পুরো দমে ধান কাটা শুরু হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ