বাড়িতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর যত্ন নেবেন যেভাবে

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী। ছোট্ট এই আণুবীক্ষণিক জীবাণুর ভয়াল থাবায় নিত্যদিন হু হু করে বাড়ছে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। মহামারিতে রূপ নেওয়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বাসায় কোয়ারেন্টিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে। সে ক্ষেত্রে সেবাদানকারী মানুষদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ দেওয়া হলো।

১. রোগীকে আলো বাতাস থাকে এমন একটি সিঙ্গেল রুমে রাখতে হবে।

২. বাসার অন্যান্য সদস্যরা আলাদা কক্ষে থাকবেন। সেটা সম্ভব না হলে আলাদা বিছানায় কম পক্ষে তিন ফুট দূরে থাকবেন বা ঘুমাবেন।

৩. রোগীর সেবা করবেন এমন একজন যার দীর্ঘমেয়াদী কোনো অসুখ নেই। আর কেবলমাত্র তিনিই সবসময় রোগীর কাছে যাবেন। কোনো দর্শনার্থী রোগীর ঘরে প্রবেশ করবেন না।

৪. হাতে দৃশ্যমান ময়লা থাকলে সেবাদানকারী সাবান ও পানি দিয়ে তার হাত পরিষ্কার করবেন। দৃশ্যমান ময়লা না থাকলে হ্যান্ডরাব (স্যানিটাইজার বা হেক্সিসল) ব্যবহার করবেন।

৫. ঘন ঘন হাত ধুতে হবে রোগীর সংস্পর্শে আসলে:

* রোগীর আশেপাশের কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসলে।

* খাবার প্রস্তুত করার আগে ও পরে।

* খাবার খাওয়ার আগে।

* টয়লেট ব্যবহারের পরে।

৬. সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পর ডিসপোজেবল পেপার টাওয়েল ব্যবহার করা ভাল। সেটা সম্ভব না হলে পরিষ্কার কাপড়ের তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে, তবে ঘন ঘন বদলাতে হবে বা ধুয়ে ফেলতে হবে।

৭. রোগী সবসময় মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করবেন। একটি মাস্ক একদিনের বেশী পরবেন না। কোনো কারণে মাস্ক ভিজে গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করবেন।

৮. কোনো রোগী যদি মাস্ক পরতে না পারেন তাহলে হাঁচি বা কাশির সময় ডিসপোজেবল পেপার টিস্যু ব্যবহার করবেন। রুমাল ব্যবহার করলে তা ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন।

৯. সেবাদানকারী সবসময় মেডিকেল মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রোগীর রুমে ঢুকবেন। মাস্ক কখনও হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না।কোন ভাবে মাস্ক ভিজে গেলে তা তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন করতে হবে।

১০. মাস্ক খোলার সময় মাথা বা কানের সঙ্গে সংযুক্ত অংশ ধরে খুলতে হবে এবং তা একটি ঢাকনাযুক্ত বদ্ধ বিনে ফেলতে হবে। তারপর হাত ধুতে হবে।

১১. রোগীর লালা, লাল-কণা, শ্লেষ্মা, মল-মূত্র, রক্ত বা পুঁজ স্পর্শ করা যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। একান্ত প্রয়োজন হলে ডিসপোজেবল গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।

১২. গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহারের আগে ও পরে হাত ধুতে হবে। একটি মাস্ক ও গ্লাভস দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা যাবে না।

১৩. রোগীর কাপড়-চোপড়, থালা-বাসন ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্যদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। সাবান ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং আবার ব্যবহার করা যাবে। ময়লা কাপড় ঝাঁকানো যাবে না।

১৪. রোগীর বিছানা, চেয়ার, টেবিল, দরজার হাতল ও অন্যান্য আসবাবপত্র বারবার পরিষ্কার করতে হবে। রোগীর জন্য আলাদা বাথরুম থাকলে তা দিনে অন্তত একবার পরিষ্কার করতে হবে। কমন বাথরুম হলে প্রতিবার ব্যবহারের পরই পরিষ্কার করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে প্রথমে সাবান-পানি বা অন্য কোনো ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর ব্লিচিং দ্রবণ (০.১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট) ব্যবহার করতে হবে।

আর পরিষ্কার করার সময় মোটা গ্লাভস, মাস্ক ও প্লাস্টিক এপ্রোন পরতে হবে। পরে গ্লাভস ও এপ্রোন পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করা যাবে।

১৫. নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

১৬. রোগী সুস্থ বোধ করলে এবং কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা পর পর নেওয়া দুটি নমুনাতে ভাইরাস না পাওয়া গেলে রোগী সুস্থ হয়েছেন বলে ধরা হবে।

পরীক্ষা করা সম্ভব না হলে অসুখ ভাল হওয়ার পর আরও দুই সপ্তাহ নিজ ঘরে আলাদা থাকতে হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ