বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বলিউড, ব্রিটিশ ভারতীয়, হলিউড এবং তেলেগু ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত নাম ইরফান খান। ৩৫ বছরের কর্মজীবনে তিনি ৫০টির অধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও চারটি ফিল্মফেয়ারসহ অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কার। চলচ্চিত্র সমালোচক, সমসাময়িক অভিনয়শিল্পী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা তাকে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী বলে গণ্য করেন। ২০১১ সালে ভারত সরকার তাকে দেশটির চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত করে।
দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলি অভিনেতা ইরফান খান। মায়ের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই বলিউডকে বিদায় জানান তিনি। মঙ্গলবার হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিস্থিতির অবনতি হতেই এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে এ বলি অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।
অসুস্থ অবস্থাতেও শেষ সিনেমা ‘আংরেজি মিডিয়াম’-এ নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছিলেন অভিনেতা। ইরফানের মৃত্যুতে বলি ইন্ডাস্ট্রিতে এক দক্ষ অভিনেতা হারাল। ডার্ক শেডের চরিত্র থেকে কীভাবে বলিউডের সেরা অভিনেতা হয়ে উঠলেন ইরফান। এক নজরে ইরফানের সেরা ছবিগুলো-
ইরফান খানের বলিউডে অভিষেক হয়েছিল শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কার পুরস্কারে মনোনীত হওয়া ‘সালাম বম্বে’ ছবির মাধ্যমে। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৮ সালে। এরপর কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে নাট্যধর্মী ‘হাসিল’। ‘হাসিল’ ছবিটির জন্য শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন ইরফান খান।
মকবুল: ২০০৪ সাল। বিশাল ভরদ্বাজ পরিচালিত ক্রাইম ড্রামাতে অভিনেত্রী তাবুর সঙ্গে অভিনয় করেন। তার অভিনয় আজও সবার মনে রয়ে গেছে। শেক্সপীয়ারের ‘ম্যাকবেথ’ নাটকটির এক ভারতীয় রূপায়ন এই ছবি।
রোগ: ২০০৫ সাল। হিমাংশু পরিচালিত ‘রোগ’ সিনেমা দিয়েই লিড রোলে বলিউডে অভিষেক হয়েছিলেন ইরফান।
নেমসেক: ২০০৬ সাল। সিনেমাটিতে ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জিতে এ বলি অভিনেতা। তাবুর বিপরীতে অভিনায় করে ইরফান নজর কেড়েছিলেন। এম আইটি থেকে পাস করা এক ভারতীয় ব্যক্তির প্রবাসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যে যুদ্ধ তাই সিনেমাটির মূল বিষয়বস্তু। অশোক চরিত্রটির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সিনেমাটি দর্শককে এক শূন্যতার মাঝে ফেলে দেয়।
লাইফ ইন আ মেট্রো: ২০০৭ সাল। অনুরাগ বাসু পরিচালিত ছবি ‘লাইফ ইন আ মোট্রো’ ছবিটি বক্স অফিসে হিটের তকমা পায়। মন্টির চরিত্রে ইরফানের অভিনয় সবার প্রশংসা কুড়ায়।
স্লামডগ মিলিওনিয়ার: ইরফানের কেরিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবি ‘স্লামডগ মিলিওনিয়ার’। পরিচালক ড্যানি বয়েলের এই বিখ্যাত ছবিতে পুলিশ ইন্সপেক্টরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইরফান। এই ছবিটি অনেক পুরস্কারই জিতে নিয়েছে।
লাইফ অফ পাই: ২০১২ সালে অ্যাডভেঞ্চার সিনেমা ‘লাইফ অফ পাই’-এ তিনি সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে অভিনয়ের মধ্যে ঢোকেন।
পান সিং তোমার: ২০১২ সালে তিগমাংশু ধুলিয়া পরিচালিত এই ছবিতে খেলোয়াড়ের চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন ইরফান। নিজের জীবনের প্রতি যারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এই ছবি।
সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার রিটার্নস: ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার’-এর সিক্যুয়েল এই ছবি। ২০১৩ সালে রোমান্টিক থ্রিলার ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এ দারুণ অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান।
দ্য লাঞ্চবক্স: ২০১৩ সালে পরিচালক রীতেশ বার্তা পরিচালিত’ দ্য লাঞ্চবক্স’ ছবিটি ইরফানের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি। কান চলচ্চিত্র উৎসবেও ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। পরবর্তীকালে ক্রিটিকস উইক ভিউয়ারস চয়েস পুরস্কার জিতেছিস এই ছবি। ২০১৩ সালে টরেন্টো চলচ্চিত্র উৎসবেও এই ছবি দেখানো হয়েছিল।
পিকু: ২০১৫ সালে সুজিত সরকার পরিচালিত ‘পিকু’ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন অভিনেতা। দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে অতি সাদামাটা অভিনয়ও করে দাগ কাটেন সবার মনে। ছবিতে একজন ট্যাক্সি ব্যবসায়ীর চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন ইরফান খান।
মাদারি: সালটা ২০১৬। পরিচালক নিশিকান্ত কামাতের পরিচালনায় থ্রিলার ছবিতে ফাটিয়ে অভিনয় করেছিলেন ইরফান। ছবিটি দর্শকমনে আলাদা জায়গা তৈরি করেছিল। সরকারের অবহেলার কারণে ছেলেকে হারিয়ে নির্মল কীভাবে তার প্রতিশোধ নেবে সেটাই ছবির মূল বিষয়বস্তু ছিল।
হিন্দি মিডিয়াম: ২০১৭ সালে সাকেত চৌধুরী পরিচালিত ‘হিন্দি মিডিয়াম’ একটি কমেডি ড্রামা। এই সিনেমারও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান। সেরা অভিনেতার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পেয়েছিলেন অভিনেতা।
ব্ল্যাকমেইল: ‘ব্ল্যাকমেইল’ ছবিটি ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল। চলচ্চিত্রর মূল চরিত্রেই অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান। তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন সমস্ত দর্শক। দেব কৌশলের চরিত্রে অভিনয় করে নেটিজেনদের মন কেড়েছিলেন অভিনেতা।
আংরেজি মিডিয়াম: বলিউড অভিনেতা ইরফান খান অভিনীত কমেডি ড্রামা ‘হিন্দি মিডিয়াম’-এর সিক্যুয়েল এই ছবি। এই ছবি দিয়েই বহুদিন পর বড়পর্দায় ফিরেছেন ইরফান খান। আর হাজারো অসুস্থতার মধ্যেই নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে এই ছবিতে নিজের বেস্ট টাই উজার করে দিয়েছেন অভিনেতা। চলচ্চিত্র জীবনে এটাই তার শেষ ছবি, যা সারাজীবন সবার মনের মণিকোঠায় থেকে যাবে।
কারিব কারিব সিঙ্গল: ২০১৭ সালে পরিচালক তনুজা চন্দ্র পরিচালিত ‘কারিব কারিব সিঙ্গল’ ছবিতেও যোগীর চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান।