করোনাভাইরাস নিয়ে চীন-মার্কিন বিতন্ডা: এবার পাল্টা অভিযোগ চীনের

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ উহানের ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে যে দাবি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তার জন্য এখন চীনা গণমাধ্যমে তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছেন তিনি।

পাল্টা চীনা গণমাধ্যমে এমন কথাও বলা হচ্ছে, এমন সম্ভাবনা আছে যে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়তো উহান নগরীতে নয়।

চীনের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে মার্কিন পররাষ্টমন্ত্রী মাইক পম্পেও যে মন্তব্য করেছেন, তাকে ‘ডাহা মিথ্যাচার’ বলে তীব্রভাষায় আক্রমণ করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত রোববার বলেছিলেন, করোনাভাইরাস যে চীনের উহান নগরীর একটি গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল তার বিরাট প্রমাণ তাদের কাছে আছে। তবে এর পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তিনি দেননি।

চীনের কট্টরপন্থী রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস মঙ্গলবার এ নিয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে যাতে তারা বলেছে মিস্টার পম্পেও আসলে ‘অধপতিত‌‌’ হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি একেবারেই জল্পনা এবং এ বিষয়ে কোনো রকমের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও তারা দেখেনি।

চীনা গণমাধ্যম কী বলছে

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে যে সমস্ত সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয় তা থেকে চীনা সরকারের চিন্তাভাবনার একটা আভাস পাওয়া যায়। তবে এখনো পর্যন্ত মাইক পম্পেওর মন্তব্যের ব্যাপারে চীনের কোন সরকারি জবাব পাওয়া যায়নি।

গ্লোবাল টাইমস গত সোমবার অভিযোগ করে যে মাইক পম্পেও যা বলেছেন তা ‌আজগুবি তত্ত্ব আর বিকৃত তথ্য ছাড়া আর কিছু নয়। মঙ্গলবার এ বিষয়ে গ্লোবাল টাইমস পম্পেওর বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

“মাইক পম্পেও আসলে মিথ্যাচারের মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করছেন”, এক সম্পাদকীয়তে দাবি করেছে গ্লোবাল টাইমস।

“প্রথমত, মিস্টার পম্পেও আশা করছেন এর মাধ্যমে আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে তারা বিজয়ী হবেন, আর দ্বিতীয়ত, মাইক পম্পেও আসলে সমাজতান্ত্রিক চীনকে ঘৃণা করেন, বিশেষ করে চীনের উত্থানকে তিনি সহ্য করতে পারছেন না।”

এই সম্পাদকীয়তে অবশ্য স্বীকার করা হচ্ছে যে শুরুর দিকে চীন যেভাবে করোনাভাইরাসের মহামারির মোকাবেলা করছিল তাতে কিছু ভুল ছিল। কিন্তু এতে একই সঙ্গে দাবি করা হচ্ছে যে চীন সরকার যেভাবে এই মহামারি সামলেছে তা ঐ সমস্ত ক্ষুদ্র ত্রুটি কে ছাড়িয়ে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।

গ্লোবাল টাইমস এই সম্পাদকীয়তে আরো বলেছে, এটা খুবই সম্ভব যে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়তো চীনের উহান নগরী নয়, অন্য কোথাও।

মিস্টার পম্পেওর মন্তব্যের বিষয়ে শুধু গ্লোবাল টাইমস নয়, অনান্য রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও চলছে একই ধরণের পাল্টা মন্তব্য এবং সমালোচনা।

পিপলস ডেইলি বলছে, মাইক পম্পেও যা বলেছেন, সেটার পক্ষে তার হাতে কোন প্রমাণ নেই।

অন্যদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভির একটি ওয়েবসাইট অভিযোগ করেছে মার্কিন রাজনীতিকরা চীনের বিরুদ্ধে হীন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

মাইক পম্পেও কী বলেছিলেন

গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মিস্টার পম্পেও বলেছিলেন, এই ভাইরাস চীনের উহানে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকেই যে ছড়িয়েছে, এর বিরাট প্রমাণ আছে।

“মনে রাখতে হবে যে সারা পৃথিবীতে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়ার ইতিহাস চীনের আছে এবং তারা যে সমস্ত গবেষণাগার চালায় সেগুলোর মান অত্যন্ত নিম্ন”।

তবে মাইক পম্পেও একথাও বলেছিলেন, ভাইরাসটি যে মানুষের তৈরি বা এতে কোন জেনেটিক পরিবর্তন করা হয়েছে, এমনটি তিনি মনে করেন না।

চীনের উহানে অবস্থিত গবেষণাগারটিতে বাদুড় থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসে গবেষণা করা হয়।

এই ভাইরাসটি উহানের গবেষণাগারে কর্মরত এক শিক্ষানবিশ এবং তার বয়ফ্রেন্ডের মাধ্যমে ছড়িয়েছে বলে যে কথা প্রচার করা হয়, সে বিষয়ে গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল।

তখন মিস্টার ট্রাম্প এই তত্ত্ব সমর্থন করেননি। তবে তিনি বলেছিলেন “আমরা এই বিষয়ে আরও বেশি করে জানছি।”

গত সপ্তাহে তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হয় যে তিনি এমন কোন প্রমান দেখেছেন কিনা যার কারণে তার এমন দৃঢ় আত্মবিশ্বাস জন্মেছে যে এই ভাইরাসটি আসলে উহানের ল্যাবরেটরী থেকেই ছড়িয়েছে।

জবাবে মিস্টার ট্রাম্প বলেছিলেন, “হ্যাঁ আমি দেখেছি‍।” তবে এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য তিনি দেননি।

গত মাসে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা খবর দেয় যে মার্কিন কর্মকর্তারা ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এই গবেষণাগারটি পরিদর্শন করেছিলেন এবং সেখান থেকে ফিরে এসে গবেষণাগারটির নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন

গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন পরিচালক ডঃ মাইকেল রায়ান বলেন এই ভাইরাস কিভাবে ছড়িয়েছে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এখনো পর্যন্ত পাননি।

তিনি আরো বলেছিলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে যা চলছে, তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে তা একেবারেই একটি জল্পনা।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলেছিল, এই ভাইরাসটি যে মানুষের তৈরী নয় বা এটিতে যে জেনেটিক পরিবর্তন ঘটানো হয়নি, সেই বিষয়ে তারা একমত।

তবে একই সঙ্গে তারা বলেছিল, ভাইরাসটি কোন সংক্রমিত পশু থেকে বা দুর্ঘটনাবশত উহানের ল্যাবরেটরী থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাবে।

কীভাবে চীন থেকে করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লো, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবিতে খুব সোচ্চার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, এরকম সম্ভাবনা আসলে সবচেয়ে বেশি যে এই ভাইরাসের উৎস হয়তো ছিল উহানের বন্যপ্রাণীর বাজার।

তবে স্কট মরিসন একথাও বলেছেন, ভাইরাসটি যে ল্যাবরেটরি থেকেও ছড়াতে পারে সেই ধারণা তিনি নাকচ করে দিচ্ছেন না।

মিস্টার মরিসন বলেন, “যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো যেন পুরো বিষয়টির একটি সঠিক পর্যালোচনা এবং স্বাধীন তদন্ত হয়। যেন কিভাবে এই ভাইরাস কোত্থেকে ছড়িয়েছে সেটা দেখা যায়। এটা বেশ স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে হবে যাতে এথেকে ভবিষ্যতের একটা শিক্ষা নেয়া যায়।

এদিকে বেশ কিছু পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্র বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে যে গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তার কোন প্রমাণ নেই।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১