শেখ হাসিনার ‘দূরদর্শী নেতৃত্বে’ ঠিকই করোনা ভাইরাস সঙ্কট জয় করবে বাংলাদেশ

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা ‘’বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’’ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে করোনাভাইরাসের দুর্যোগ মোকাবেলায় পাশে থাকা মানুষটির খোঁজ রেখে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনা মহামারী ও পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বেও বিষয়বস্তু ছিল ‘করোনাভাইরাস সংকটে মানবিক সহায়তা’।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলি ফরহাদের পরিচালনায় বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আলোচকরা আশা প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দূরদর্শী নেতৃত্বে’ ঠিকই করোনা ভাইরাস সঙ্কট জয় করবে বাংলাদেশ।
এই মহামারীতে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই বৈশ্বিক মহামারিতে শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। করোনা সংকটে ৫ কোটির বেশি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা এবং ৫০ লাখ পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঈদ উপহার দেয়া হয়েছে।
এই দুর্যোগে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মনোবল শক্ত রেখে এই বৈশ্বিক সঙ্কট আমরা মোকাবেলা করবো ইনশল্লাহ। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কর্মহীন মানুষদের খোঁজ খবর রাখতেও বলেন তিনি।
আলোচকদের প্যানেলে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমনি বলেন, ‘’শুধু সরকার নয়, আমাদের জনগণকেও, যেমন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি বিশেষৃ আমরা যেন সমাজের একজন আরেক জনের পাশে দাঁড়াই। সরকারের পাশাপাশি আমাদের যার যতটুকু আছে তা নিয়ে আমরা আমাদের পাশের মানুষটির পাশে দাঁড়াব।’
এ সময় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ছয় মাসের খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্যোগ এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪ মে পর্যন্ত শিশু খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের জন্য প্রায় ৯২ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে । ১ লাখ ৬২ হাজার ৮১৭ মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে।
৫০ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সরাসরি আড়াই কোটি মানুষ এই সহযোগিতার আওতায় এসেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার মোট ১৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন।
১৮ তম যে প্রণোদনার প্যাকেজটি সেখানে তিনি দুই হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল দিয়েছেন প্রবাসী ও তরুণদের জন্য। মোট ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের এই প্রণোদনা প্যাকেজ। অর্থাৎ আমাদের জিডিপির মোট তিন দশমিক ছয় শতাংশ।
আলোচনায় ছিলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা সম্মুখ সমরে কাজ করছেন। বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যম সরকারের বর্তমান অবস্থানকে সমর্থন করে। এই মহা দুর্যোগ গণমাধ্যমের দিক থেকে কয়েকটি ইতিবাচক দিক দেখছি। একটি হচ্ছে রাজনীতির মানবিক চেহারা।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সদস্য শিপ্রা দাস বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রথম দিকে আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও পিপিই বিতরণ করি। পরে আমরা খাবার প্রজেক্ট শুরু করি। প্রথমে শুকনো খাবার বিতরণ করি। প্রায় দুই লাখ পরিবারে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় তিন লাখ মানুষের কাছে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছি।
এদিন রাত ১০টা থেকে দুই ঘণ্টার এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
করোনা দুর্যোগ শুরুর পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি সারাদেশে করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী ও খাদ্য সহায়তা সামগ্রী প্রদান অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
তিনি বলেন ‘সারাদেশ ব্যাপী প্রায় ৬০টি সাংগঠনিক জেলা ও ২০০ উপজেলায় করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিলো ৫০ হাজার উন্নত মানের মাস্ক, ২০ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ৫ লক্ষ এন্টিসেপটিক সোপ, ২৫০০ পিপিই ও ১০০ থার্মাল থার্মোমিটার। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এসব সামগ্রী প্রদান করে হয়েছে।’
আওয়ামী কৃষকলীগের সভাপতি সমীর চন্দ বলেন, ‘কৃষকের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য কৃষকের সচেতন করার লক্ষ্যে গনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘সারা বাংলাদেশকে ১০টি অঞ্চলে ভাগ করে কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিরসনে এবং অসহায় কৃষকদের জমির পাকা ধান কেটে দেয়ার জন্য ১০টি হটলাইন নাম্বার চালু করে কৃষক লীগ এবং প্রতিটি জেলা মনিটরের জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে দুটি হটলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে।
“সরকার ঘোষিত ২৬টাকা কেজি দরে কৃষকের ধান কেনা কার্যক্রমে যাতে সঠিক কৃষককে খুজে পাওয়া যায় ও কৃষক যাতে সঠিক দাম পায় এবং কোন হয়রানি ছাড়া যাতে খাদ্য সামগ্রী খাদ্য গোডাউনে পৌছে দিতে পারে সেই জন্য উপজেলা ভিত্তিক ৭ সদস্যের একটি মনিটরিং টিম গঠন করেছে” বলেন সমীর চন্দ ।
আওয়ামী যুবলীগের সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল জানান, ‘করোনা ভাইরাসের শুরুর থেকে সারাদেশে জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরন করা হয়। এছাড়া জনসচেতনতামূলক একটি রেকর্ডিং মাইকিং করার জন্য সারাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় জনগনকে সচেতন করতে’।
নিখিল আরো বলেন, ‘বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার পর শ্রমিক সংকট দেখা দিলে সারাদেশে অসহায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে যুবলীগের নেতা কর্মীরা। এছাড়া পবিত্র রমজানে সারাদেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ইফতার বিতরন করছে দলটির নেতা কর্মীরা’।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের শুরুর থেকে সারাদেশে জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরন, এছাড়া জনসচেতনতামূলক একটি রেকর্ডিং সারাদেশে মাইকিং করার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মীরা সারাদেশে ত্রান বিতরন করে চলেছেন’।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আল নাহিয়ান খান জয় সংঠনের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তারা এই সংকট মুহূর্তে কাজ করে যাচ্ছে মানুষের জন্য। “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা কৃষকের পাশে দাঁড়াই, এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর প্রশংসাও করেন। আমি এবং আমাদের সাধারণ সম্পাদকসহ আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীবৃন্দসহ সারাদেশের ছাত্রলীগ একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে করোনা সংকট মোকাবিলায়” বলেন নাহিয়ান।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘করোনা সংকটের শুরুতে ছাত্রলীগ সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সংকটে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
লেখক বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মেডিক্যাল ছাত্র ছাত্রীদের সমন্বয়ে আমরা টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছি। সেবামূলক কার্যক্রম একেবারে ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত অব্যাহত আছে।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১