ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান মোতায়েন: ভারত কি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে?

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ চীন ও ভারতের মধ্যে লাদাখ নিয়ে সংঘাত আরও বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গেল সোমবার (১৫ জুন) লাদাখে চীনা সেনাদের হামলায় ভারতের ২৩ সেনা নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা এখনো থামেনি। দুই দেশের সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের দুই দিনের বৈঠকেও কোনো সুরাহা আসেনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ভারত তার বিমানঘাঁটিগুলো প্রস্তুত করছে। ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান মোতায়েনও করা হচ্ছে।

শুক্রবার পত্রিকাটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে গলওয়ান উপত্যকায় যুদ্ধবিমান নামাতে শুরু করেছে দেশটির বিমানবাহিনী (বায়ুসেনা)। এর আগে বিমানবাহিনী প্রধান আর এস ভাদুরিয়া সেখানে প্রায় সারাদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে আসেন। শ্রীনগরের ঘাঁটিও পরিদর্শন করেছেন তিনি।

অন্যদিকে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে হেভিওয়েট চার মন্ত্রীকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উক্ত বৈঠকে ভারতীয় সেনার চিফ জেনারেল এমএম নারাভানও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও অর্থমন্ত্রীর নির্মলা সীতারমণ। রাত ১০টা নাগাদ মন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন প্রধানমন্ত্রী। সীমান্তের উত্তেজনা, পরবর্তী কূটনৈতিক পদক্ষেপ, সেনাবাহিনীর অবস্থান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা করেন তারা। পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়।

বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত করতে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে বলে আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে। যে কোনও রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফরওয়ার্ড বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলিতে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে সেনা সুত্রে খবর।

সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি হিসেবে শ্রীনগর, লেহ, গগনগীর মহাসড়কজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে চলছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান। মোড়ে মোড়ে তৎপর অস্ত্রে সজ্জিত সেনা, আধা সেনা ও পুলিশের সদস্যরা।

ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী গ্রামগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে কেউ যাতায়াত করতে পারছেন না। সেখানে সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। মাঝপথে আটকে দেয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের গাড়ি।

লাদাখ স্বায়ত্ত্বশাসিত পার্বত্য উন্নয়ন কাউন্সিলের (এলএএইচডিসি) প্রধান নির্বাহী কাউন্সিলর গয়াল পি ওয়ানগাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ভারত ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে যেখানে সংঘর্ষ হয়েছিল, সেখানের নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) নিকটবর্তী গ্রামগুলোর মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

বর্তমান ভারত-চীন সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আকাশে উড়ছে একাধিক সামরিক হেলিকপ্টার। চিনুক কার্গো হেলিকপ্টার, অ্যাপাশে অ্যাটাক হেলিকপ্টার, পি-৮ সার্ভেইলেন্স এয়ারক্র্যাফ্ট (নজরদার বিমান) এবং আইএল-৭৬ স্ট্র্যাটেজিক এয়ারলিফ্টার-ও (কার্গো বিমান)। হেলিকপ্টারগুলির মাধ্যমে বিপুল সেনা ও রসদ মজুত করা হচ্ছে সেনাবাহিনীর সূত্রে উল্লেখ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

উল্লেখ্য, চীন ও ভারতের মধ্যে সর্বশেষ সংঘাত হয়েছিল ১৯৭৫। তখন ভারত-চীন সীমান্তে শেষবার কোনও সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর থেকে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখে বা ইস্টার্ন সেক্টরে অরুণাচলে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি কম হয়নি। কিন্তু এ ধরনের প্রাণঘাতী মারামারি কখনও হয়নি।

তবে সোমবারের সংঘাতে কোনও পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। লোহার রড, লাঠি, পাথর নিয়ে হামলা করেছে চীনা সেনা। তারপরই প্রত্যাঘাত করেছে ভারতীয় সেনারা।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘাতের পরিবেশ বিরাজ করায় এসব অস্ত্রের মজুত করা হয়েছে।

কিছুদিন আগে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, চীন সেনাবাহিনী সীমান্তের যে এলাকায় রয়েছে সেখান থেকে ভারতের অংশে ঢুকতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাগবে। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে চীনা বাহিনী।

ভারতীয় সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়, চীনের সেনাবাহিনী লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের কাছের ঘাঁটিগুলিতে নানান যুদ্ধের গাড়ি ও ভারী যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে। বিষয়টি জানতে পেরে ভারতও আর্টিলারের মতো অস্ত্র ওই এলাকায় পাঠিয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০