বগুড়া নিউজ ২৪ঃ লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় বিশেষ অভিযান চালাতে পারে ভারতীয় সেনারা। এজন্য সেখানে বিশেষ ঘাতক কমান্ডো বাহিনী পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেনা সূত্রের যা খবর, তাতে পূর্ব লাদাখে ভারতের প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারিভাবে কিছু বলা না হলেও, গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাজুড়ে সমরসজ্জা এবং নয়াদিল্লির তৎপরতা গালওয়ানে বিশেষ অভিযানের দিকেই ইঙ্গিত করছে, মনে করছেন অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ।
গালওয়ানে রবিবার (২১ জুন) রাত পর্যন্ত সেনা তৎপরতার যা গতিপ্রকৃতি, তাতেও অনেকে অভিযানের ইঙ্গিত দেখছেন। মূলত চারটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ওই এলাকায়। খবর এই সময়ের
প্রথমত, এই মুহূর্তে সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অভিযানের জন্য তৈরি করে ফেলা হয়েছে বিশেষ ঘাতক প্ল্যাটুনকে।
দ্বিতীয়ত, জলে-স্থলে-আকাশপথে কঠোরতম নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট তিন বাহিনীকে।
তৃতীয়ত, তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হল কোনোরকম গোলমালের সম্ভাবনা দেখলেই যাতে জওয়ানরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারেন, সে জন্য বলপ্রয়োগের পূর্ণ কর্তৃত্ব এবং স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে বাহিনীকে। অর্থাৎ, নয়াদিল্লি থেকে অনুমতি আসার অপেক্ষা করতে হবে না তাদের। চতুর্থত, যুদ্ধাস্ত্র কেনার জন্য সেনাবাহিনীর হাতে অর্থক্ষমতা দেওয়া।
সূত্র বলছে, এই অভিযান হতে পারে নিয়ন্ত্রিত, যাকে বলা হচ্ছে ‘লিমিটেড এরিয়া অপারেশন’। কেননা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই বলে ফেলেছেন যে, ভারতের ভূখণ্ডে কেউই ঢুকতে পারেনি। এখানে কেউ কোনো সেনাছাউনি দখল করতে পারেনি। এর পরে গালওয়ানে বড় মাপের অভিযান চালানো সেনাবাহিনীর পক্ষে এখনই সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে। আবার ওই এলাকার বাস্তবতা বলছে, দ্রুত অভিযান না-চালালেই নয়।
রাশিয়া সফরে যাওয়ার আগে রবিবার চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সাথে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানেই জানিয়ে দেয়া হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীন যে আগ্রাসন দেখাচ্ছে, তাতে ‘রুলস অফ এনগেজমেন্ট’ বদলাতে বাধ্য হচ্ছে ভারতের মতো শান্তিপূর্ণ দেশ। ভারত-চীন মুখোমুখি সংঘর্ষের ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি শনিবারই দেয়া হয়েছিল। তেমন বেগতিক বুঝলে জবাব দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা যে বাহিনীর রয়েছে, রবিবার তা-ও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে বৈঠকে।
গালওয়ান, প্যাংগং হ্রদ, গোগরা উষ্ণ প্রস্রবণের মতো এলাকায় চীনা ফৌজের সক্রিয়তা বেড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ রকম চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় ভূখণ্ডের আট কিলোমিটারের মধ্যে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন হাতছাড়া হতে পারে সেনাবাহিনীর। অতএব, নিয়ন্ত্রিত অভিযানের দিকেই ভারত যেতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
একদিকে যখন এ সব পরিকল্পনা চলছে, তখন সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে তিন পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘাতক কমান্ডোদের। যে ‘লিমিটেড এরিয়া অপারেশনে’র ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর, তাতে আঘাত হানার সবথেকে বড় দায়িত্বটি থাকবে এই ঘাতক কমান্ডোদের উপরে।
ঘাতক প্লাটুন বেছে নেয়ার কারণ, এই কমান্ডোরা গালওয়ানের (১৪ হাজার ফুট) মতো উচ্চতায় যুদ্ধ করতে সক্ষম। যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এরা শত্রুকে মোকাবিলা করতে পারেন। অভিযানের সময় এই কমান্ডোরা এগিয়ে যাবেন। পিছন থেকে তাদের কভারে থাকবে সেনার হেভি মেশিনগান, আরপিজি ৭ (রকেট প্রোপেলড গ্রেনেড লঞ্চার) এবং মর্টার ফায়ারিং। শত্রুর বাঙ্কার ধ্বংসে বিশেষ কার্যকরী আরপিজি৭।
সেনা সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই গালওয়ানে ফিঙ্গার ফোর থেকে ফিঙ্গার এইট পর্যন্ত এলাকায় চীনা সেনার গতিবিধি বেড়েছে অনেকটা। তার জেরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লোকেশন পিপি (প্যাট্রলিং পয়েন্ট) ১৪ এলাকায় নিত্যদিনের টহলদারি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় সেনা। বহুবার বলা সত্ত্বেও চীনা সেনা অবস্থান ছাড়েনি। এই এলাকাতেই হতে পারে বিশেষ অপারেশন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেনাকে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া অত্যন্ত সময়োচিত পদক্ষেপ। কেননা, কোনো অভিযান বা অনুপ্রবেশ রুখতে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তৎক্ষণাৎ। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সংঘর্ষ চলাকালীন খুব বেশি সময় পাওয়া যায়, এমনও নয়। ঘটনাস্থলে থাকা জওয়ানদের থেকে পরিস্থিতি কেউ ভালো বুঝতে পারেন না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রামেশ্বর রায়ের বক্তব্য, খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। তবে মে মাসের গোড়া থেকেই তো লাদাখে ভারত ও চীনের সেনার মধ্যে সমস্যা হচ্ছিল, ছোটখাটো সংঘর্ষ চলছিল। তখনই কেন এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হল না?
ভারত ও চীনের সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্তজুড়েই এই বিশেষ নজরদারি চলবে। সীমান্তে লাল ফৌজের গতিবিধি নখদর্পণে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বাহিনীকে। রাওয়াত ছাড়াও সেনাপ্রধান এমএম নারাভানে, নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল করমবীর সিং এবং বিমানবাহিনী প্রধান মার্শাল আরকেএস ভাদোরিয়াকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, তিন দিনের রাশিয়া সফরে চীনের এই আগ্রাসনের প্রসঙ্গ তুলে ধরবেন তিনি।
এছাড়া চীনের মোকাবিলায় যাতে বাহিনীর হাতে অস্ত্রের অভাব না-হয়, তা নিশ্চিত করতে দেয়া হয়েছে অর্থক্ষমতাও। এ বার থেকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তিন বাহিনী আলাদা করে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে পারবে। তার আগে অবশ্য কারণ জানাতে হবে প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়কে। এত দিন বাহিনী তাদের চাহিদার কথা প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়কে জানাত। মন্ত্রণালয় সেই সব অস্ত্র কিনে দিত বাহিনীকে। কিন্তু এ বার আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বাহিনী নিজের অস্ত্র নিজেই কিনে নিতে পারবে। এই ক্ষমতা পাওয়ার পরে তিন বাহিনীই তাদের প্রয়োজনমতো অস্ত্র ও সরঞ্জামের তালিকা তৈরি করে ফেলছে যাতে দ্রুত সে সব কেনা যায়।
উৎসঃ আরটিএনএন