সকালের খাবারের গুরুত্ব

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ সাধারণত আমরা তিন বেলা খাবার খেয়ে থাকি- সকাল, দুপুর ও রাত। কিন্তু কোন বেলার খাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালবেলার খাবারই সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করে। আপনি হয়তো এ সম্পর্কে আগেও শুনেছেন। গবেষণা বলছে, সকালের খাবার এড়ানো উচিত নয়। কিন্তু সকালে খাবার খাওয়া এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে- যারা সকালে খাবার খান তাদের অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে যায়, আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায় ও কাজের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। জার্নাল ওবেসিটিতে প্রকাশিত ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব স্থূল নারী সকালে ৭০০ ক্যালরি ও রাতে ২০০ ক্যালরি খেয়েছেন তাদের ওজন সেসব স্থূল নারীদের চেয়ে বেশি কমেছিল যারা সকালে ২০০ ক্যালরি ও রাতে ৭০০ ক্যালরি খেয়েছেন। এটা ধারণা দিচ্ছে যে সকালের খাবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

এছাড়া আরও কিছু গবেষণায়ও সকালের খাবার গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক পাওয়া গেছে। প্রকৃতপক্ষে, সকালের খাবারের গুরুত্ব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মুখপাত্র টরি আর্মুল বলেন, ‘সকালের খাবার ও ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণার ফলাফল মিশ্র প্রকৃতির। কিছু লোক সকালে খাবার না খেলে পরবর্তীতে বেশি করে ক্ষুধা বাড়ে ও অতিরিক্ত খাবার খেয়ে থাকেন। অন্যদের ক্ষেত্রে সকালের খাবার না খাওয়াতে তেমন প্রভাব পড়ে না।’

সকালে যেমন তেমন খাবার খেয়ে ওজন কমানোর আশা করতে পারেন না। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, সকালে খাবার খাওয়ার পরও ওজন না কমার অন্যতম কারণ হলো কি কি খাওয়া হচ্ছে তাতে মনোযোগ না দেয়া।
সকালের খাবারকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের সমন্বয় থাকতে হবে, বলেন অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের আরেক মুখপাত্র আলিসা রুমসি। বেশিরভাগ মানুষ সকালের খাবার হিসেবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খেয়ে থাকেন, যেমন- সাদা পাউরুটি, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, মাফিন কেক ও বিস্কুট। এসব খাবার দ্রুত শক্তি যোগাবে ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীতে ক্ষুধা অনুভূত হবে ও আরো খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাবে। রুমসি বলেন, ‘যারা পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খেয়ে থাকেন তারা দ্রুত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন ও শক্তি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কিন্তু সকালে ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেলে শরীর দীর্ঘসময় সতেজ থাকে, কারণ প্রোটিন ও ফ্যাট শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করে।’

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, ওজন কমাতে চাইলে সকালে খাবার খাওয়া উচিত। সকালের খাবার এড়িয়ে গেলে দুপুরে ক্ষুধার মাত্রা বেড়ে যাবে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। পেটে ক্ষুধা নিয়ে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

রুমসি বলেন, ‘ক্ষুধার্ত পেট আত্মনিয়ন্ত্রণকে ধ্বংস করতে পারে। তাই সকালে খাবার না খেলে দুপুরের খাবারের আগে কিছু খেয়ে নিন। এর ফলে দুপুরে খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ার প্রবণতা কমবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠেই পেট পুরাতে হবে তা নয়, কয়েক ঘণ্টা পর খেলেই ক্ষুধার প্রবণতা কমে যাবে ও আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে।’ সকালে শক্ত খাবারের পরিবর্তে স্মুদি পান করতে পারেন অথবা একটি কলা ও দুই টেবিল চামচ পিনাট বাটার খেতে পারেন। ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেয়ে দিন শুরু করলে ডায়েট সাকসেস অর্জিত হবে বা ওজন নিয়ন্ত্রণে সফল হবেন। আর্মুল বলেন, ‘সকালে খাওয়ার জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর খাবার রয়েছে। এসব খাবার দিয়ে দিন শুরু করলে বাকিটা সময় অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝোঁক কমে যাবে। আপনার ব্রেকফাস্ট ডায়েটে সিদ্ধ ডিম, বাদাম, দই ও নাট বাটার রাখতে পারেন। এসময় খোসাসহ ফল ও শাকসবজি খেতে পারলে ভালো।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ