নামাজের পর অর্থ উপার্জনের চেষ্টাও ইবাদত

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ নামাজ ইসলাম প্রধান ইবাদত। কিন্তু নামাজ পড়ার পরপরই হালাল জীবিকা উপার্জনে জমিনে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। কেননা হালাল আয়-রোজগারে জীবিকা নির্বাহ করলে তাতে ইবাদত-বন্দেগিও কবুল হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘অতপর নামাজ শেষ হলে তোমরা জমিনে (পৃথিবীতে) ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)

আল্লাহ তাআলার দরবারে ইবাদাত-বন্দেগি কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো হালাল রিজিক। হালাল পথে উপার্জনের মানসিকতা তৈরি ব্যতিত ইবাদাত-বন্দেগিতে পরিপূর্ণ মনোযোগ দেয়া সম্ভব নয়। আর অভাব-অনটনের কারণে অবৈধ উপায়ে স্বচ্ছলতা লাভ করে তা দ্বারা জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে ইবাদাত-বন্দেগি করলে আল্লাহ তাআলা সে ইবাদাত গ্রহণ করবেন না। অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ খরচ করে ইবাদাত বন্দেগিতে মনোযোগীও হওয়া যায় না।

তবে ইবাদাত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়ার জন্য আবার অধিক অর্থেরও প্রয়োজন নেই। কারণ যার মধ্যে চাহিদা যত বেশি তার মধ্যে ইবাদাত-বন্দেগির ঘাটতি তত বেশি। অধিক অর্থ চাহিদা মানুষকে অন্যায়ের পথে বেশি ধাবিত করে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাগণ বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন না। কোনো রকমে দিন-যাপন করতেন এবং আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকাতেন। এটাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। মুসলিম উম্মাহরও এ লক্ষ্য হওয়া উচিত।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান দারিমি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে পরিবারের লোকদের কাছে খেজুর আছে; তারা ক্ষুধার্ত হতে পারে না।’ (মুসলিম)

সুতরাং যারা ক্ষুধার্ত নয়, তাদের ইবাদাত-বন্দেগিতে মনোযোগী হতে কোনো বাধা নেই। ক্ষুধা নিবারণের জন্য এখানে অনেক সম্পদের প্রয়োজন তারও উল্লেখ নেই।

এ জন্যই কুরআনে কারিমে নামাজ আদায়ের পরপরই জীবিকার অন্বেষনে বের হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। কারণ ইবাদাত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়ার জন্য হালাল রিযিক প্রয়োজন। ক্ষুধা নিবারণের জন্যও হালাল রিজিক প্রয়োজন। আর ক্ষুধা নিবারণ যেহেতু বিলাসিতা নয় বরং ইবাদাত। তাই ইবাদাত মনোযোগী হওয়ার জন্য হালাল রিজিক তালাশ করা আল্লাহ নির্দেশ এবং ইবাদত।

মনে রাখতে হবে
জীবন ধারণের জন্য উপার্জনে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তিকে উপার্জন করতে হবে। অর্থ উপার্জন ছাড়া পৃথিবীতে বসবাস করা যেমন সম্ভব নয়, তেমিন ইবাদাত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়াও সম্ভব নয়।

তাই মুসলিম উম্মাহর পক্ষে অলসভাবে বসে থেকে সময় নষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। ইবাদত-বন্দেগি তথা নামাজ শেষ করেই নিজের এবং পরিবারের খরচ নির্বাহে উপার্জনের জন্য বের হওয়া আবশ্যকীয় কাজ। ইবাদাত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়ার জন্য হালাল উপায়ে জীবিকা সন্ধানে তথা প্রয়োজনীয় রিজিক তালাশে জমিনে বিচরণ করাই হলো আল্লাহ তাআলা হুকুম।

সুতরাং অভাব মোচনে হালালভাবে অর্থ উপার্জনে সব সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি এ প্রার্থনা করা জরুরি-
اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আ’ফাফা; ওয়াল গেনা।
অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক হালাল রিজিক লাভ এবং ইবাদত-বন্দেগি কবুলে যথাযথ পদক্ষেপ ও কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ