ঋণ দিতে প্রস্তুত ব্যাংক, ‘অনাগ্রহ’ ট্যানারি ব্যবসায়ীদের

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ প্রতিবার কোরবানি পশুর চামড়া কেনার বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। প্রতিবার এই ঋণ পেতে আগেভাগে সক্রিয় থাকলেও এবার ব্যবসায়ীদের তেমন একটা ঋণ আবেদন জমা পড়েনি। গেলবছরের প্রায় সাতশ কোটি টাকার চামড়া বিক্রি না হওয়া এবং এবার করোনাকালে চামড়া কেনা ও বিক্রির ঝুঁকির চিন্তায় এই অনাগ্রহ বলে ট্যানারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য।

ট্যানারি খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতবছরের প্রায় সাতশত কোটি টাকার চামড়া এখনো অবিক্রিত। আর এবার করোনার কারণে কি পরিমাণ পশু কোরবানি হবে─ সেগুলোর চামড়া বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে কি-না─ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কবে স্বাভাবিক হবে─ এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দুচিন্তা রয়েছে।

আর একারণে দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা এবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিতেও তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীরা অনাগ্রহ দেখালেও সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু ব্যাংক এবারও প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ব সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংক প্রতিবছর কোরবানি ঈদের আগে চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে থাকে। এবছরও তাদের লক্ষ্য রয়েছে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে মাত্র একজন ব্যবসায়ীর। তাকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া দিয়েছে। আর বাকি টাকা তহবিলে পড়ে আছে।

সোনালী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন খান জানান, গতবছর ৪টি প্রতিষ্ঠানকে আমরা ঋণ দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি যোগ্য হওয়ায় আমরা তাকে ঋণ দিয়েছি।

রূপালী ব্যাংক এবার চামড়া খাতে ঋণ দিতে ১৫৫ কোটি টাকার তহবিল রেখেছে। তবে মাত্র তিনটি প্রতিষ্টান ঋণের জন্য আবেদন করেছে। সামিনা, বেঙ্গল ও এমএস ট্যানারি কোম্পানি ৫০ কোটি টাকা ঋণ চেয়ে আবেদন করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো যাচাইবাচাই শেষে মঙ্গলবার ব্যাংকের বোর্ড সভায় তাদের ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

জনতা ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দিতে এবার ১০০ কোটি টাকার তহবিল রেখেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির উপ-মহাব্যবস্থাপক মুজিবর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে সোমবার পর্যন্ত ১৮টি আবেদন জমা পড়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এদিকে সবচেয়ে বেশি তহবিল রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের। এবছর ব্যাংকটি ১৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এখন পর্যন্ত পাঁচজন গ্রাহক ১০৫ কোটি টাকার ঋণ আবেদন করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরী জানান, তাদের ব্যাংকে এ পর্যন্ত মাত্র একজন ব্যবসায়ী আবেদন করেছে। সেটার আমরা যাচাই-বাছাই করছি।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এএমডি মতিউল হাসান জানান, তাদের ব্যাংকে ৩০ কোটি টাকার তহবিল রয়েছে চামড়া খাতের জন্য। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত কোনও আবেদনই জমা পড়েনি।

তৈরি পোশাকের পর চামড়া দেশের বৃহৎ রপ্তানি খাত। তবে পরিবেশ দূষণ এড়াতে ব্যর্থ বাংলাদেশের ট্যানারি থেকে সরাসরি চামড়া আমদানি বন্ধ রেখেছে ইউরোপের দেশগুলো। বর্তমানে চীন এদেশের প্রসেসড লেদারের সবচে বড় বাজার। সেখান থেকে হাত ঘুরে ইতালি, জার্মানিসহ উন্নত দেশগুলোতে যায় বাংলাদেশের চামড়া।

কিন্তু এবার করোনার প্রকোপে একরকম বন্ধই হয়ে গেছে চামড়া রপ্তানি। চলতি বছর ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের চামড়া, যা লক্ষ্যমাত্রা ও গতবারের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম।

এদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ জানান, প্রায় ৬০০-৭০০ কোটি টাকার চামড়া অবিক্রিত অবস্থায় আছে। তারা এখনও কোনো এলসি পাননি।

তিনি বলেন, ‘এবছর করোনা সংকটের কারণে বিদেশে চামড়া রপ্তানি করা যাবে কিওনা এটা নিয়ে দ্বিধার মধ্যে রয়েছে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা। ফলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ঋণ নেওয়ার বিষয়ে।’

রুমা লেদার ইন্ডাস্ট্রিস এর স্বাত্তাধিকারী প্রকৌশলী তাহের জানান, হাজারীবাগ থেকে সাভারে গেলেও সেখানে তারা শতভাগ সুবিধা পাচ্ছেন না। তাছাড়া গতবারের চামড়া নিয়েও তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ