মানচিত্র থেকেও মুছে গেল ভস্মীভূত রোহিঙ্গা গ্রাম

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ তিন বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রাম কান কিয়ায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর পুরো গ্রাম বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবার মিয়ানমারের সরকারি মানচিত্র থেকেও গ্রামটিকে মুছে ফেলা হয়েছে। জাতিসংঘ জানায়, গত বছর মিয়ানমার সরকার দেশের নতুন যে মানচিত্র তৈরি করেছে সেখানে কান কিয়া গ্রামের অস্তিত্ব নেই। মানচিত্র থেকে গ্রামটির নাম মুছে ফেলা হয়েছে। নাফ নদী থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কান কিয়া গ্রামে কয়েকশ’ মানুষের বাস ছিল। ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের সময় কান কিয়ায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। পুরো গ্রাম আগুনে পুড়ে যায়। পোড়া শরীর নিয়ে গ্রামের যেটুকু চিহ্ন দাঁড়িয়ে ছিল সেটাও বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। মিয়ানমার সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে ওই অভিযান চালালেও জাতিসংঘ একে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছে। রাখাইনে সেনা অভিযানের সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের অনেকের শরীরে গুলি বা আগুনে পোড়া ক্ষত ছিল। ওই শরণার্থীদের বর্ণনায় মিয়ানমার সেনাদের সাধারণ মানুষের উপর ভয়াবহ নিপীড়নের চিত্র ফুটে উঠে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের সেনাদের বিরদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে শুনানি চলছে। কান কিয়া গ্রামটি আগে যেখানে ছিল সেখানে এখন ডজনের বেশি সরকারি ও সামরিক ভবন গড়ে উঠেছে। এমনকি ভূউপগ্রহের ছবিতে পুলিশ ঘাঁটির জন্য দেওয়া আঁকাবাঁকা বেড়াও দেখতে পাওয়া যায়। ‘গুগল আর্থ’ এ ওই ছবিগুলো দেখতে পাওয়া যায়। ‘প্ল্যানেট ল্যাব’ থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছেও কয়েকটি ছবি পাঠানো হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওই গ্রামটিতে আগে থেকেই বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। মিয়ানমারে জাতিসংঘের ‘ম্যাপিং ইউনিট’ ২০২০ সালে দেশটির নতুন ম্যাপ বানিয়েছে। মিয়ানমারের সরকারি মানচিত্রের ভিত্তিতে জাতিসংঘের ‘ম্যাপিং ইউনিট’ নিজেদের ম্যাপ তৈরি করে। জাতিসংঘের অধীনে নানা সংস্থা ওই ম্যাপ ব্যবহার করে। তারা জানান, নতুন মানচিত্রে গুঁড়িয়ে ফেলা গ্রামের নাম আর নেই। বরং ওই জায়গাটিকে এখন কাছের মংডু শহরের বর্ধিত অঙ্ক বলা হচ্ছে। ২০১৭ সালের অভিযানের সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী কান কিয়ার মত অন্তত চারশ’ গ্রাম ধ্বংস করেছে বলে জানায় নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’। তারা ভূউপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে। ধ্বংস করা গ্রামগুলোর মধ্যে অন্তত এক ডজন গ্রামের নাম এখন মানচিত্র থেকেও মুছে দেওয়া হয়েছে। শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘‘তারা চায় আমরা যেন আর ফিরে না যাই। মোহাম্মদ রফিক কান কিয়ার কাছের আরেকটি গ্রামের গ্রাম প্রধান ছিলেন। মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় রাখাইন রাজ্যের পুনঃগঠনের কাজ দেখভাল করছে। রয়টার্স থেকে তাদের কাছে গ্রামের নাম মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার কারণ এবং কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনা হবে তা জানতে চাওয়া হলে তারা এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে (জিএডি) যোগাযোগ করতে বলে। সেখানে যোগাযোগ করে কারো সাড়া পাওয়া যায়নি। রয়টার্স।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০