নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক সেবায় দেশের মডেল বগুড়া

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ গত এক বছরে বগুড়ার ১২টি থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে অভিযোগ আসে ১ হাজার ৬৬৫টি। এর মধ্যে কাউন্সিলিং বা মিমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয় এক হাজার ৪১৯টি। এসব অভিযোগের বেশিরভাগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে খুব সংগোপনে। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের সদস্যকেও বিষয়টি জানতে দেয়া হয়নি।

এ জন্য জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এই প্রকল্পটি ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। আর তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগীতা করছে বাংলাদেশ পুলিশ। শুধু তাই নয় বগুড়ার কার্যক্রমের সাফল্যতায় দেশে এই জেলাকে মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছে পুলিশ সদর দফতর।

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বগুড়া পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে প্রকল্পটির এক অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা এ কথা জানান। তিনি বলেন, নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক থেকে অনেকে সুফল পেয়েছে। এমন কিছু সমস্যার সমাধান আমরা করেছি, যেখানে ভুক্তভোগীরা মৃত্যু ছাড়া অন্য পথ খুঁজে পাচ্ছিল না।

তিনি পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান করেন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে নারীদের প্রতি আমাদের অত্যন্ত সংবেদনশীল হতে হবে। না হলে তাদের সুষ্ঠুভাবে সেবা দেয়া নিশ্চিত হবে না।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে নারী ‍ও শিশু হেল্প ডেস্কের সাথে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা ও সেচ্ছাসেবকদের পুরস্কার বিতরণী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। এসময় ছয় জন সেচ্ছাসেবককে এই কাজে অংশগ্রহণ করায় ক্রেস্ট ও সনদ দেয় জেলা পুলিশ। তারা হলেন, সদর উপজেলার সেচ্ছাসেবক পুষ্পা খাতুন, জামি আল মুজাহিদ, মেহেদী হাসান। গাবতলীর মিতু খাতুন, শাজাহানপুরের মো. আতিকুর রহমান ও ধুনটের হাবীব রহমান।

অনুষ্ঠানে সফলতার সাথে কাজ করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের পুরস্কার স্বরুপ ক্রেস্ট দেয়া হয়। পুস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, জেলা নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের ফোকাল পারসন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস কুমার পাল। গাবতলী- সারিয়াকান্দি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন। নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত কবীর। নারী ডেস্কের দায়িত্বে থাকা সদর থানার উপপরিদর্শক রোজিনা খাতুন ও কাহালু থানার উপপরিদর্শক গুলবাহার খাতুন।

এ ছাড়াও জেলায় সার্বিকভাবে ভূমিকার রাখার জন্য ইউএিএফপিএর বগুড়ায় প্রতিনিধি তামিমা নাসরীনকে সম্মাননা স্বরূপ ক্রেস্ট দেয়া হয়।

পুরস্কার পাওয়া সেচ্ছাসেবকদের মধ্যে পুষ্পা খাতুন ও জামি আল মুজাহিদ জানান, তারা ২০১৮ সাল থেকে ইউএনএফপিএর সাথে কাজ করছে। এর আগে গত বছর সংস্থা থেকে তাদের পুরস্কৃত করা হয়। এবার জেলা পুলিশ তাদের পুরস্কার দিল। নিজেদের কাজের স্বীকৃতি পাওয়ায় তারা খুব খুশি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা। সঞ্চলনায় ছিলেন ইউএনএফপিএর জেলা প্রতিনিধি তামীমা নাসরীন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার (প্রশাসন), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শহীদুল ইসলাম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস এম কাওছার, ডা. সামছী আরা বেগম, ইন্ডিপেডেন্ট টিভির উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান হাসিবুর রহমান বিলু, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ডালিয়া নাসরিন রিক্তা, মাহফুজা ইসলাম, পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ঝুনু এবং আইনজীবী ফেরদৌসি রুনা।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে বগুড়ায় কাজ শুরু হয়েছে। এতে ১০৫ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হয়েছে। প্রথম দিকে নন্দীগ্রাম, কাহালু ও সদর উপজেলায় এই প্রকল্প শুরু হয়। পরবর্তীতে গত বছরে জেলা পুলিশ সুপার নিজ উদ্যোগে ১২ টি উপজেলার থানায় এই সেবা চালু করেন।

লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) এ প্রকল্পে ১২ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কাজ করে থাকে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক। এসবের মধ্যে যৌন হয়রানি, যৌতুক, বাল্যবিয়ে, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা, গণধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, পারিবারিক কলহ, অপহরণ, পরকীয়া এবং সাইবার ক্রাইম।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ১২টি থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে ১৬৬৫টি অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৪১৯টি অভিযোগ মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। ২২২টি অভিযোগ জিডি ভুক্ত করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়াও ৩০৪টি অভিযোগ আপোষ যোগ্য না হওয়ায় মামলা রেকর্ড করা হয়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০