মহান শিক্ষা দিবসের চেতনায় শিক্ষার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হোন। সকল শিক্ষার্থীদের বেতন ফি মওকুফ, মেস ভাড়া মওকুফ করতে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ, অনলাইন ক্লাস ও পরিক্ষা পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত আয়োজন নিশ্চিত করাসহ করোনা কালীন ৬ দফা বাস্তবায়ন করার দাবিতে-আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ‘২০ বেলা:১১ টায় সাতমাথায় মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে সংগঠনের জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় বর্মনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ জেলা আহŸায়ক কমরেড এ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রিয় সহ-সভাপতি শ্যামল বর্মন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার সদস্য সচীব নিয়তি সরকার, পলিটেকনিক শাখার ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম, পূজা প্রামাণিক প্রমূখ।
কমরেড এ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের ইতিহাস এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের বিজয়ী ইতিহাস। শিক্ষাকে বাজারের পণ্যে পরিণত করা,সা¤প্রদায়িক করা,শিক্ষার ৬০ ভাগ ব্যয়ভার অভিভাবকদের বহন করাই ছিল মূল উদ্দদেশ্য। যা দেশ স্বাধীনের ৪৯ বছরেও বিদ্যমান। এটা অত্যন্ত লজ্জার । করোনাকালে মানুষের আয়ের পথ বন্ধ, স্কুুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় থমকে আছে। দেশের যুব শক্তিকে বেকার করে রেখেছে সরকার। এ সময়েও দুর্নীতি, লুটপাট,শিক্ষা বাণিজ্য থেমে নেই। সরকারি -বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে মাসিক ফি, সেমিনার ফিসহ নানা ফি শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের চাপের মুখে ফেলে আদায় করে নেয়া হচ্ছে। অপরিকল্পিত ‘ সাধারণ ছুটি’র কারণে শিক্ষার্থীরা নানা রকম চাপ ও অনিশ্চয়তায় যেমন ছিল, তেমনি কোনো ধরণের আয়োজন-প্রস্তিুতি ছাড়াই অনলাইনে ক্লাসের ঘোষণা মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে এসেছে। বৃহৎ একটা অংশের শিক্ষার্থীরা থাকছে এই অনলাইন ক্লাসের আওতার বাইরে। ফলে চরম বৈষম্য তৈরি করেছে। করোনায় মানুষ মরছে। তা প্রতিকারে ভোটারবিহীন সরকারের কোন ধরণের সঠিক উদ্যোগ দেখা যায়নি বরং ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যাবসা করার জন্য, জনগণের পকেট কাটার নতুন উপায় বের করতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। সবশেষে ভ্যাকসিন বিনামূল্যে জনগণের জন্য বরাদ্দ দেয়ার দাবি রাখেন।
ছাত্রনেতা শ্যামল বর্মন বলেন, ১৯৬২ সালের শিক্ষানীতিতে বলা হয়ে ছিলো ‘ সস্তায়’ শিক্ষা লাভ করা যায় বলিয়া তাহাদের যে ভুল ধারণা রহিয়াছে, তাহা শীঘ্রই ত্যাগ করিতে হইবে। যেমন দাম তেমন জিনিস- এই অর্থনৈতিক সত্যকে অন্যান্য ব্যাপারে যেমন, শিক্ষার ব্যাপারেও তেমনি এড়ানো দুষ্কর। অর্থাৎ,এ নীতি শিক্ষাকে বাজারে আলু, পটলের মত কেনা বেচার আয়োজন করেছে। যেমন দাম তেমন জিনিস। পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে ডক্টর কুদরতে খুদা, মজিদ খান, শামসুলহক, মনিরুজ্জামান মিয়া কমিশিন এবং জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বতে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ আমরা দেখতে পাই কথার মারপ্যাচে নীতির জায়গা একই টাকা যার শিক্ষা তার। শিক্ষা যে আমাদের মৌল মানবিক অধিকার সে কথা ভুলিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ গরীব মানুষের সন্তানদের পড়ানোর প্রয়োজন নেই, যার টাকা আছে, শিক্ষা কেনার সামর্থ্য আছে সেই পড়তে পারবে। এটা আইয়ুবী শিক্ষা সংকোচন নীতিরই প্রতিধ্বনি! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাবলম্বী করার নামে নানা ধরনের ফি আরোপ করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপর আর বাণিজ্যিক কোর্স এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে একবেলা পাবলিক একবেলা প্রাইভেটে পরিণত করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষা হারাচ্ছে মর্মবস্তু। তাই এই মহামারিতেও একদল মুনাফা লোভী ব্যস্ত কিভাবে শিক্ষার্থীদের এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে আরো মুনাফা লাভ করা যায়। বাইরের দেশে যখন বিনামূল্যে দেশের সকল নাগরিকে ভ্যাকসিক দেয়ার চেষ্টা চলছে তখন আমাদের দেশের সরকার শিক্ষা, গবেষণা ও স্বাস্থ্যখাতে নূন্যতম প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে ব্যর্থ। তাই তিনি ১৯৬২ সালে এস এম শরিফে শিক্ষা নীতির আদলে প্রণীতি শিক্ষা নীতি প্ররিহার করে, সকল মানুষের বিনা মূল্যে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে সর্বজনীনী বিজ্ঞান ভিত্তিক একই পদ্ধতির গণতান্ত্রিক শিক্ষা নীতি প্রনয়নের দাবি জানান।
সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৬২ সালের এস এম শরীফ কমিশনের শিক্ষানীতির মূল বক্তব্য শিক্ষা সংকোচন ও সা¤প্রদায়িক নীতি”টাকা যার শিক্ষা তার” এ নীতির প্রতিবাদে এদেশের ছাত্র-শ্রমিক বুকের তাজা রক্তে রুখে দিয়েছেন। শাসকদের শিক্ষা সংকোচনের নীতি। শহীদ হয়েছেন মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল, সুন্দর আলীসহ অনেকে, স্বাধীন দেশে ৫০ বছরের বাস্তবায়িত হয়নি কাঙ্খীত শিক্ষা নীতি। অন্তত মহামারী করোনাকালে যে বাজেট শিক্ষাবান্ধব, স্বাস্থ্য বান্ধব, গণবান্ধব হওয়ার কথা তাও হয়নি। শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশ থেকে কম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন সংকটে। শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবীর হয়ে পড়েছে। দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মেস ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছে কিন্ত তাদের ভাড়া মওকুফ করা হচ্ছে না। তারা মেসে না থেকেও মাসে মাসে ভাড়া দিতে হচ্ছে। অবিলম্বে মেসভাড়া/বাসা ভাড়া মওকুফে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দের দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ধনঞ্জয় বর্মন বলেন, ১৯৬২ সালে শহীদদের চেতনা ছিল শিক্ষা হবে সবার। ধনী গরিব বৈষম্য থাকবে না। শিক্ষা কোনো পণ্য নয় এবং শিক্ষা সা¤প্রদায়িকীকরণ হবেনা। কিন্তু দেশ স্বাধীনের এত বছর পরও তা অপূরিত রয়ে গেছে। এ করোনা কালেও শিক্ষা বাণিজ্য, বৈষম্য ব্যাপক মাত্রায় উন্মোচিত হয়েছে। শহীদদের চেতনা ধারণ করে ছাত্র, অভিভাবকসহ নানা পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ৬ দফা নিয়ে যে আন্দোলন করছে তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।