দিনাজপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ দিনাজপুরে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে, কখনো নদীর পাড় কেটে, আবার কখনো আবাদি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল। এতে নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে, ঘটছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। সেইসঙ্গে বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে সৃষ্ট চোরাই খাদ বা গর্তে ডুবে প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

এছাড়াও বালু বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে বেপরোয়া ট্রাক্টর এবং ১০ চাকার ভারি যান (ট্রাক)। এতে গ্রামীণ জনপদের রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। এভাবে বেপরোয়াভাবে ট্রাক্টর চলাচল ও ভেঁপু বাজানোর বিকট শব্দ আর বহনকৃত বালুকণা উড়ে চরমভাবে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ।

যদিও সংবাদ সংগ্রহকালীন কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় দিনাজপুর চিরিরবন্দরের কাঁকড়া নদীর কারেন্টেরহাট বালুমহালে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি বীরগঞ্জের কাশিপুর বালুমহাল এবং খানসামার গোবিন্দপুর বালু মহালে সরকারের ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুরোদমে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনকে এলাকাবাসী, পরিবেশবিদরা বার বার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। প্রশাসন যেনো, ‘কানে দিয়েছে তুলো-পিঠে বেঁধেছে কুলো’ পথ অবল্বন করছে।

নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে, কখনো নদীর পাড় কেটে, আবার কখনো আবাদি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল। এতে নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে, ভাঙছে পাড়, নদীতে বিলিন হচ্ছে ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি ও গাছ-পালা।

প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বীরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর বালু মহাল এবং খানসামার গোবিন্দপুর বালু মহলে সরকারি ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন চলছে। কাশিপুর বালু মহলটি বীরগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন হলেও বালু উত্তোলন চলছে খানসামা উপজেলা এলাকায়। সেই ইজারাদার এবং তার সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্ত থাকা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি খানসামা গোবিন্দপুর বালু মহালেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

এই বালু মহলটি এবার সরকার কোনো ইজারা দেয়নি। তারপরও চলছে, ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। কিছু মহাসড়কে চলাচলে অনুমোদনপ্রাপ্ত ১০ চাকার ভারি যান (ট্রাক) এই বালু বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে এলাকার রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরছে খানসামা উপজেলার রাস্তা-ঘাট।

স্থানীয় খানসামা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু হাতেম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে এই ১০ চাকার ট্রাক চলাচলের বিষয়ে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করলেও বর্তমানে নিশ্চুপ রয়েছেন। তার নীরবতার কারণ হলো বিতর্কিত ওই বালু মহাল দুটির সঙ্গে তার এক ছেলেও জড়িত আছেন।

এলাকাবাসী জানায়, আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি কাশিপুর বালু মহাল সরকারিভাবে ইজারা নিলেও তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় উপজেলার চেয়ারম্যানের ছেলে, বিএনপির একজন বিতর্কিত ঠিকাদার-ভাটার মালিকসহ আরো কয়েকজন। স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের কিছু ব্যক্তিবিশেষ অবৈধ ওই বালু মহাল থেকে সাপ্তাহিক উৎকোচ পাওয়ায় তা প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ।

এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এর আগে তাদের ড্রেজার মেশিন জব্দ করে জরিমানা করেছি। কিন্তু পরে তারা জানাচ্ছেন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে অনুমতি রয়েছে ঠিকাদার তুহিনের।

পরে এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে ইউএনও জানেন যে, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেই, তাছাড়া ঠিকাদার তুহিন ওই বালু মহালের ইজাদার নয়। প্রকৃত ইজারাদার আব্দুল গফুর।

গোবিন্দপুর বালু মহালের কোনো সরকারি ইজারা না হওয়া সত্তেও কিভাবে বালু উত্তোলন হয়- এমন প্রশ্নে ইউএনও জানান, বীরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর ঘাটে বালু উত্তোলন হচ্ছে। সেটা দেখবেন বীরগঞ্জ ইউএনও, আমি নই।

এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি। জায়গাটা জানি না।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মাহাবুবুল আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমরা জেলার বেশকিছু বালু মহাল থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা করেছি, যা আগে ছিল না। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্যে স্থানীয় ইউএনওদের বলা আছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ইতোমধ্যে অনেক বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ। ড্রেজার মেশিন আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া এবং জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত আছে। পর্যায়ক্রমে করা হচ্ছে। অবৈধ কাজে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে। বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। জীব-বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীতে চোরাই খাদ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে গোসল করতে নেমে এই চোরাই খাদে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। জেলার কয়েকটি নদীতে গত পাঁচ বছরে এভাবেই প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ জন যুবক। অবৈধ পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের ফলে মারাত্মকভাবে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০