কোন আপেল বেশি ভালো : লাল না সবুজ

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ আপেল মূলত তার মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয়। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে—“An apple a day, keeps the doctor away”. অর্থাৎ প্রতিদিন অন্তত একটি করে আপেল খান আর ডাক্তার থেকে দূরে থাকুন। বুঝতেই পারছেন প্রতিদিন আপেল খাওয়ার গুরুত্ব কতখানি? অন্যান্য ফল কেন নয়? কেন কলা, কমলা, পেয়ারা বা আম নয়? কারণ আপেলে একসাথে সব পুষ্টি উপাদান আছে, যা বিভিন্ন ফলে থাকলেও একসাথে একটি ফলে নেই| তাই এই প্রবাদের প্রচলন ও আপেল খাওয়ার গুরুত্ব অনেক|

এটি রোসাসি (Rosaceae) পরিবারের ম্যালিয়াস ডমেস্টিকা (Malus domestica ) প্রজাতিভুক্ত। সারা পৃথিবীব্যাপী আপেলের চাষ হয়ে থাকে এবং সবচেয়ে বেশি চাষকৃত প্রজাতি হচ্ছে জেনাস ম্যলুস (genus Malus)। মধ্য এশিয়াকে আপেলের উৎপত্তিস্থল মনেকরা হয়, যেখানে এখনও তার পূর্বতন বুনো প্রজাতি ম্যলুস সিভেরসিকে (Malus sieversii) দেখতে পাওয়া যায়। হাজার হাজার বছর ধরে এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে আপেলের চাষ হয়ে আসছে এবং ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে লাতিন আমেরিকায় এর পদার্পণ হয়। অনেক সংস্কৃতিতে আপেলের ধর্মীয় এবং পৌরাণিক তাৎপর্য আছে, এদের মধ্যে নর্স, গ্রীক এবং ইউরোপীয়ান খ্রিস্টীয় ঐতিহ্য অন্যতম। সাধারণত আপেলের জাতগুলি মূলের কলমের মাধ্যমে তৈরি করা হয়, যা ফলস্বরূপ গাছের আকার নিয়ন্ত্রণ করে। আপেলের প্রায় ৭,৫০০ টির বেশি পরিচিত জাত রয়েছে।

আপেল রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, diabetes হওয়া থেকে রক্ষা করে, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে, বিভিন্ন রকম ক্যান্সার হওয়া থেকে শরীর কে রক্ষা করে, blood pressure, হার্টের অসুখ থেকে রক্ষা করে এবং ফুসফুস কে রক্ষা করে| আপেল শরীরের ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে| এতে অন্যান্য ফলের তুলনায় প্রচুর antioxidant আছে| আপেল muscle tonic, diuretic, laxative, antidiarrheal, antirheumatic, ও stomachic.

লাল আপেল অনেক দিন ধরেই পরিচিত। আর অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম সবুজ আপেলের চাষ শুরু হয়। মারিয়া অ্যান স্মিথ নামে এক মহিলা প্রথম সবুজ আপেলের চাষ করায় এই ধরনের আপেলকে গ্র্যানি স্মিথ আপেলও বলা হয়। ফ্রান্সের ক্র্যাব আপেল এবং রোম বিউটির হাইব্রিড করে ১৮৬৮ সালে প্রথম সবুজ আপেল উত্‍পন্ন করা হয়। সবুজ ও লাল আপেলের মধ্যে পুষ্টিগুণ প্রায় এক। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সবুজ আপেলে খাদ্যগুণ বেশি থাকে। সবুজ আপেলে সুগার ও কার্বের পরিমাণ কম থাকে। অন্যদিকে ফাইবার, প্রোটিন, পটাসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন কে বেশি মাত্রায় থাকে।

তবে এই পার্থক্যটা খুবই সামান্য। কিন্তু লাল আপেলের সঙ্গে সবুজ আপেলের তফাত্‍ করিয়ে দেয় ভিটামিন এ। লালের তুলনায় সবুজ আপেলে দ্বিগুণ বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। তবে লাল আপেলে কিন্তু সবুজের থেকে অনেক বেশি পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন এ বেশি থাকায় সবুজ আপেল দৃষ্টিশক্তি উন্নত, হাড়ের শক্তি বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে বেশি উপকারী। তবে সবুজের থেকে লাল আপেল বেশি পাওয়া যায় বলে এটিই বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। আর লাল আপেল খেলেও উপকার কিছু কম পাবেন না।

আপেল এর উপকারিতাঃ

আপেল ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ আপেল খেলে অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩% হারে কমে। কারণ আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনল থাকে। আপেলের মধ্যে ট্রিটারপেনয়েডস উপাদান লিভার, স্তন এবং কোলোনের মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে বাঁধা দেয়। তাছাড়া এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, আপেলের মধ্যে যে পরিমাণে ফাইবার থাকে, তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।

আপেল হার্ট ভালো রাখেঃ আপেলে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট উপাদানসমূহ, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্টে রক্তচলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে হৃদযন্ত্রের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ওজন নিয়ন্ত্রণে আপেল খাওয়া খুবই উপকারী। ফলটিতে উপস্থিত ফাইবার কোনও ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে এর ফলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। যেসব মহিলা ওজন কমাতে চায় তারা দৈনিক তিনটি আপেল খেলে ডায়েট করার চেয়ে ভালো ফল পাবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আপেলের মধ্যে কুয়েরসেটিন নামক এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিসের সমস্যা কমায়ঃ আপেলে পেকটিন নামের একটি উপাদান থাকে যা ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

শরীরের ত্বক ভালো রাখেঃ আপেল ত্বক মলিন রাখে এবং মুখের ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত প্রতিদিন আপেল খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়। সুধু তাই নয়,

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভনয়েড ও পলিফেনল নামক উপাদান আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান উপাদান । আর এই উপাদান দুটি আমাদের শরীরের DNA এর ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যানসারও রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ নিয়মিত আপেল খেলে পাকস্থলীতে হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়। যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ