বগুড়ায় শাশুড়ির শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আওয়ামীলীগ নেতা রানার বিরুদ্ধে

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে দলীয় পদ-পদবি ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন শাশুড়ি।

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তার শাশুড়ি দেলওয়ারা বেগম। আনোয়ার হোসেন রানা নন্দীগ্রাম উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার সামছুল হকের ছেলে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রানা জেলা পরিষদ সদস্য পদেও রয়েছেন। ওই মামলায় আসামী করা হয়েছে রানার স্ত্রী আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারাকেও।

ভুক্তভোগী দেলওয়ারা বেগম বগুড়া সদরের কাটনারপাড়া এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃত শেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। গত ৫ বছর ধরে দেখা শোনার অজুহাতে তার কাছেই ছিলেন মেয়ে-জামাই। সেবা-শুশ্রূষার অজুহাতে কখনো শাশুড়িকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আবার কখনো জিম্মি করেন রানা।

ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্বামীর মৃত্যুর পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরি পরিচালনা করছিলেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে ছিলেন তার পাঁচ মেয়ে আকিলা শরিফা সুলতানা, মাহবুবা শরিফা সুলতানা, নাদিরা শরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা শরিফা সুলতানা।

অংশীদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা শহরের শাকপালা ও চারমাথা এলাকায় শরিফ সিএনজি লিমিটেড নামের দুটি ফিলিং স্টেশন এবং নবাববাড়ি রোডে দেলওয়ারা-শেখ শরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট পরিচালনা করে আসছিলেন।

দেলওয়ারা বেগম আরো অভিযোগ করেন, শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে জামাই আনোয়ার হোসেন রানা ও মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানাকে ব্যবসা দেখাশোনার মৌখিক অনুমতি দেন।

কিন্তু এক পর্যায়ে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফাঁকা স্ট্যাম্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক চেক ও এফডিআরসহ বিভিন্ন নথিপত্রে তার সাক্ষর নেন জামাই। এরপর তার নিজের নামীয় ব্যাংক একাউন্ট থেকে নগদ টাকাসহ এফডিআর ভাঙিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশি তুলে নেন।

২০১৫ সালের ১ জুন থেকে এই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ তুলে আত্মসাৎ করেছেন মেয়ে-জামাই। এরই বাইরে একই সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার নামীয় ব্যাংক হিসাব থেকে আরও ৫০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। আর তাদের এই কাজে সহায়তা করেছেন শরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক কাম ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলাম (৩৮), ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক হাফিজার রহমান (৫০) এবং সুপারমার্কেটের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম (৫০)।

দেলওয়ারা বেগম জানান, জামাই আনোয়ার হোসেন রানা পিস্তল উঁচিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। এরই মাঝে গত ২১ সেপ্টেম্বর বাসার আলমারি-সিন্দুক থেকে নগদ অর্থ, ব্যাংকের চেক, এফডিআর এবং ব্যবসায়িক সকল নথিপত্র নিয়ে চলে যাযন।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বরে আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন মরহুম শরিফ উদ্দিনের চার মেয়ে মাহবুবা শরিফা সুলতানা, নাদিরা শরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা শরিফা সুলতানা।

তাদের অভিযোগ, অসুস্থ বিধবা মা দেলওয়ারা বেগমকে জিম্মি করে, ভুল বুঝিয়ে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আনোয়ার হোসেন রানা।

অভিযোগ দেয়ার পর এখন তিনি আত্মগোপন করেছেন। আত্মগোপনে থেকেই তাদের অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছেন বলেও জানান ভুক্তভোগী পরিবারটি।

অভিযোগের বিষয় জানতে আনোয়ার হোসেন রানার সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ