বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই : রাষ্ট্রপতি

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে যারা আলাদা করে দেখার চেষ্টা করেছেন, তারা ব্যর্থ হয়েছেন।  বাংলাদেশকে জানতে হলে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে।রাষ্ট্রপতি বলেন, এই দুই সত্তাকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা যারা করেছেন, তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের বাস্তবতা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সোমবার সংসদের বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সন্ধ্যায় অধিবেশন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষে পৌঁছালে নিয়ম মাফিক জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দেওয়া ভাষণের ভিডিও সংসদ কক্ষে দেখান হয়।পরে স্পিকারের পাশে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রপতি, যিনি গণপরিষদ ও দেশের প্রথম সংসদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আইনসভায় ব্ঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন।রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে বঙ্গবন্ধু বিশ্বকে করেছেন আলোকময়। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সে লক্ষ্যে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত হতে পারে, সেজন্য সকলকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এদেশের জনগণ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু সকলের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।দেশের সাধারণ মানষকে যারা ‘বিভ্রান্ত করে’, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য। যে ঐক্য একাত্তরে আমাদেরকে এক করেছিল, সেই ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে।”রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমত সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।“যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনী ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন।”‘মুজিববর্ষ’ পালনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে এবং বিশেষ অধিবেশন আয়োজনের জন্য স্পিকার ও জাতীয় সংসদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি।এ অধিবেশনের কার্যক্রম বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।“জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অধিবেশনে জাতির পিতাকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে আমরা নিজেরাও সম্মানিত হব। সীমিত সময় ও পরিসরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তার জীবন ও কর্মের বিস্তৃতি এতটাই বিশাল যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিন আলোচনা করলেও তা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।“স্মারক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যখন সংসদ কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেইসব দিনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭২ সালের ২২ মার্চ রাষ্ট্রপতির ২২ নম্বর আদেশবলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গণপরিষদ গঠন করা হয়। ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম ‘গণপরিষদ’ অধিবেশন বসে।১৯৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা সেই গণপরিষদের সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।সেই পরিষদের সদস্য হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, গণপরিষদের প্রধান দায়িত্ব ছিল দেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা। কনিষ্ঠ ও নবীন সদস্য হিসাবে গণপরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ ছিল আমার জন্য খুবই আগ্রহ ও আকর্ষণের। নিতান্ত নবীন সদস্য হিসাবে বয়ঃজ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ সদস্যদের কর্মকাণ্ড খুবই আগ্রহভরে প্রত্যক্ষ করতাম। পার্লামেন্টারিয়ান বঙ্গবন্ধু তখন ছিলেন আমার আগ্রহের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে।তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতেন। গণপরিষদে কোনো (প্রধান) বিরোধী দল ছিল না। বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র- সব মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা ১০ এ উন্নীত হয়নি। কিন্তু বিরোধী সদস্যগণ প্রতিবাদমুখর ছিলেন, দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখার সুযোগ পেতেন। সংসদ অধিবেশন হত প্রাণবন্ত। যুক্তিতর্ক ও মতামত উপস্থাপন ছিল খুবই আকর্ষণীয়। সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল সংসদে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ও তার ভাষণ।সংসদে বিরোধীদের বঙ্গবন্ধু গুরুত্ব দিতেন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি সেই সময় ন্যাপ থেকে নির্বাচিত, পরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথাও তুলে ধরেন।তিনি বলেন, আমার স্পষ্ট মনে আছে, ন্যাপ থেকে নির্বাচিত তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা। পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সুযোগ চাইলে সবসময়ই তিনি সুযোগ পেতেন। স্পিকার মাঝে মাঝে তাকে মাইক দিতে না চাইলেও বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘ওকে সুযোগ দেন, বিরোধী পক্ষের কথা আগে শুনতে হবে’।রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শুধু যে আমাদের দলীয় সদস্য থেকে কমিটি করব তা নয়, দল-মত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, জনগণকে যাতে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী একটা সুষ্ঠু সংবিধান দেওয়া যায়, এই উদ্দেশ্যে সকলের মতামত চাইব, এই সংবিধানে মানবিক অধিকার থাকবে, যে অধিকার মানুষ চিরজীবন ভোগ করতে পারবে’।

রুলস অব প্রসিডিওরের খসড়ার ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টিই একেবারে সবকিছু চূড়ান্ত করে নাই। দুই-একজন যারা নির্দলীয় বা বিরোধী পার্টি যাই বলুন, আমার কোনো আপত্তি নাই, যদি আপনাদের ভালো কোনো সংশোধনী থাকে, তা নিশ্চয়ই দেশের মঙ্গলের জন্য মনকে আমরা বড় করে তা গ্রহণ করব।সেই সময়কার আইনপ্রণেতা আবদুল হামিদ বলেন, সংসদে আরও একটা বিষয় ছিল লক্ষ্যণীয়, পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার বিব্রত হতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হতেন না। উদার না হলে, গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন না হলে এটা ভাবাই যেত না। ১৯৭৩ সালের পার্লামেন্টে আতাউর রহমান খান, এমএন লারমাসহ বিরোধী দলের কয়েকজন এমপি ছিলেন। তখনও দেখেছি, তারা কথা বলতে চাইলেই সুযোগ পেতেন। প্রায় সময় বঙ্গবন্ধুই স্পিকারকে বলে সে সুযোগ করে দিতেন। বিরোধী দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আলাদা একটা মনোযোগ ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের যত অমিলই থাকুক, বঙ্গবন্ধু কখনো বিরোধী দলের নেতাদের কটাক্ষ করে কিছু বলতেন না বরং তাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার’ তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল।জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, আপামর জনগণের আর্থিক সহায়তার জন্য চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দেশের ১০০টি উপজেলায় পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল বিতরণ করা হয়েছে। সারাদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুব উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব।রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল যখন এভাবে কাজ করে, তখন জাতির উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দলমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। মুজিববর্ষে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনাভাইরাস মানবসভ্যতাকে ইতিহাসের এক চরম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর অপার সম্ভাবনাময় বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। করোনার প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি, কর্মহীন হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। উন্নত বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায়। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়।তিনি এলন, ইতোমধ্যে করোনায় আমরা অনেককে হারিয়েছি, যাদের মধ্যে রয়েছেন বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্সসহ নানা পেশা ও বয়সের মানুষ। করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ অর্থনীতির সকল সেক্টরে।‘লকডাউনের’ বাস্তবতার কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, কোটি কোটি মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় জীবনযাত্রায় নেমে এসেছিল অচলাবস্থা। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ দফা নির্দেশনা দেন এবং প্রতিনিয়ত ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন, দিক-নির্দেশনা দেন।  তার এই সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্ত এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সাহসিকতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য আমি আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যাতে সবাই পায়, সেজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, একক বা আঞ্চলিক ভিত্তিতে এর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আজ আমরা কেউই সুরক্ষিত নই, যতক্ষণ পর্যন্ত না সুরক্ষার জন্য ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। অতীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্লেগ, স্প্যানিশ ফ্লু, কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষা, হাম, ম্যানিনজাইটিস, পোলিও ইত্যাদি মহামারী ও সংক্রামক ব্যাধিতে কোটি কোটি লোক প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান থেমে থাকেনি। সময়ের অগ্নিপরীক্ষায় মানুষ এসবের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে। তাই একসময় যা মহামারী ছিল, আজ তা বিশ্ব থেকে নির্মূল হয়েছে।তিনি বলেন, গোটা বিশ্ববাসীর মতো আমরাও আশাবাদী, অচিরেই করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কৃত হবে যা গোটা মানবজাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তা, হতাশা, উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি দেবে। স্বস্তি ফিরে আসবে ঘরে ঘরে। তবে এ ভ্যাকসিন বিশ্বের সকল দেশ ও অঞ্চল যাতে একই সময়ে ও সমভাবে পায় তা নিশ্চিত করতে বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। আমি জাতিসংঘসহ বহুজাতিক সংস্থা ও উন্নতবিশ্বকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যথাসময়ে ভ্যাকসিন পাওয়ার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এটা জেনে তিনি আশাবাদী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না‘। করোনা মহামারী আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি।রাষ্ট্রপতি আমি আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে করোনাসহ সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বাঙালি জাতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে এবং গড়ে তুলবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ২১ অক্টোবর এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেন। একাদশ সংসদের দশম এই অধিবেশন রবিবার শুরু হলেও বিশেষ অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম আজ  সোমবার শুরু হলো। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম চলবে। এরপর আগামী সপ্তাহে দুই/তিন বার্যদিবস সাধারণ বৈঠক আকারে চলার পর এ অধিবেশন শেষ হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ